যখন আমাদের নিকটতম আত্মীয়, যেমন শিম্পাঞ্জি এবং গরিলাসের সাথে তুলনা করা হয়, মানুষের যৌনমিলনের কৌশলটি কিছুটা অদ্ভুত। গোটা প্রাণী সাম্রাজ্যের মধ্যে মনোগ্যামি অভ্যাস খুবই বিরল, তাহলে মানুষ কেন এই সামাজিক আদর্শ তৈরি করলো, সেই প্রশ্নই এখানে উঠছে। ন্যাচার কমিউনিকেশন জার্নালে গতবছর প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে যে প্রেম এবং আনুগত্যের জন্য মনোগ্যামি হওয়া সম্ভবত কারন নয়, বরং সিফিলিস ও ক্ল্যামিডিয়া মূল কারন হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
নৃবিজ্ঞানী ও জীববিজ্ঞানীগণ যখন আমাদের নিজস্ব প্রজাতি হোমো সেপিয়েন্স নিয়ে কথা বলেন অনেকেই এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন প্রমাণ নিয়ে—নারীদের তুলনায় গড়ে বেশি বয়সের পুরুষেরা মেয়েদের কাছে যায়, কারন মেয়েদের যৌন পরিপক্কতা ছেলেদের তুলনায় আগে হয়—মনে হতে পারে এই পয়েন্টে যে আমাদের প্রাকৃতিক মেটিং সিস্টেম বহুগামি হওয়া উচিত, অবশ্য একজন পুরুষ অনেক নারীর সাথে যৌনমিলন করতে পারে। তাহলে কেন আমরা সামাজিকভাবে বিশাল সংখ্যক জুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে মনোগ্যামি আরোপ হতে দেখি?
যৌনবাহিত সংক্রমণ বা STI ও দম্পতিদের মধ্যে সঙ্গীদের চাপের প্রভাবে বহুগামি হতে একগামিতে আসতে পারে গতবছরের একটি গবেষণার গবেষকগণ বলেন, এর কারন হিসেবে হতে পারে যেহেতু কৃষিকাজের সুযোগ সুবিধা চলে আসে এবং মানুষ একই জায়গায় বড় সম্প্রদায় হয়ে বসবাস করতে শুরু করে। গবেষকগণ কম্পিউটার মডেলে বিভিন্ন ধরণের যৌনাচরণ সিমুলেশন ব্যবহার করে ও যখন ব্যাক্টেরিয়াজনিত যৌন সংক্রামন যেমন ক্লামিডিয়া, সিফিলিস, ও গনেরিয়া ছড়াচ্ছে, তারপর তারা তা মূল্যায়ন করেন। এর পরে তারা আরেকটা সামাজিক চাপের মাত্রা যোগ করেন।
কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণা সহ-লেখক ক্রিস বাউচ এক বিবৃতিতে ব্যাখ্যা করে বলেন, “এই গবেষণা দেখায় প্রাকৃতিক পদ্ধতির ঘটনাগুলি যেমন সংক্রামক রোগের বিস্তার, সামাজিক মানদণ্ডের উন্নয়ন এবং বিশেষ করে আমাদের গ্রুপ ভিত্তিক সিদ্ধান্তগুলির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। “আমাদের গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে শুধু গাণিতিক মডেলটি হতে কেবল ভবিষ্যতের ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া যায় না, অতীতকে বোঝা যায়।”
তারা দেখল যে ছোট ছোট বহুগামি সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ইনফেকশনের (বা STI) প্রাদুর্ভাব দ্রুত সমাধান করে ফেলে, অবশ্য অনেকে মনে করে এই ছোট বহুগামি সম্প্রদায় পূর্বের হান্টার-গেদারার বা শিকারী-সংগ্রাহকরা গঠন করেছে। এর অর্থ যে যারা মনোগ্যামি সম্পর্ক গড়েছে তাদের তুলনায় তারা অনেক বেশী সন্তান উৎপাদন করেছে। কিন্তু গবেষকগণ তারপর দেখলেন যে যখন তাদের সম্প্রদায় আকার বড় হচ্ছে তারা স্থানান্তর হয়েছে। এখানে তারা দেখে যে STI মহামারি আকারে ছড়াচ্ছে যদি সমাজ বড় আকারে পলিগ্যামাস হয়, আর পুরুষদের উর্বরতা কমে যাচ্ছে, এবং এর ফলে তারা দেখলো মনোগ্যামাস থাকলে বেশী সফলতা পাচ্ছে। বহুগামি কাউকে শাস্তি দিয়ে যখন মনোগ্যামাস দম্পতিতে রাখা যায় তাতে সফলতা বেশী, ফলে একজন সঙ্গীর সাথে থাকাকেই সেরা কৌশল বলে মনে করে।
এছাড়াও এখনো অনেকে বিশ্বাস করে যে আমরা প্রজাতি হিসেবে প্রাকৃতিকভাবে পলিগ্যামাস। পিছনে ফেলে আসা শিকারী-সংগ্রাহক সমাজের মধ্যে সামান্যই টিকে আছে তাদের দিকে নজর দিয়ে নৃতাত্ত্বিকরা প্রায়শই আমাদের অতীতের উইন্ডো হিসেবে ব্যবহার করে, এবং বলে আসলে মনোগ্যামাস আপনি যা আশা করেন তার তুলনায় অনেক বেশী সাধারণ। আসল ঘটনা হচ্ছে প্রজাতির মধ্যে লিঙ্গ অনুপাত প্রায় ৫০/৫০, আমাদের মতো। বহুবিবাহ অ-প্রজননকারী পুরুষের একটি সম্পূর্ণ গুচ্ছ তৈরি করে যারা সামাজিকভাবে বিভ্রান্তিকর হতে পারে। সমাজের মধ্যে বহুবিবাহ নারীদের জন্য অসুবিধাজনক, শুধু কম সন্তান জন্মদেওয়ার প্রবণতাই নয়, যেহেতু তারা অন্য নারীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে, বাইরের পুরুষদের থেকে শিশুহত্যার হুমকি বৃদ্ধির সম্মুখীনও হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৩৫
আপনার মতামত জানানঃ