একা নয়, বরং হিংস্র প্রাণীদের থেকে বাঁচতে দলগত জীবনযাপনকেই বেছে নিয়েছিল মানুষ। সমাজের জন্ম সেখান থেকেই। শুধু মানুষই নয়, পিঁপড়ে, মৌমাছি, হাতি, হরিণ, এমনকি সিংহ—বহু প্রাণীই অভ্যস্ত সামাজিক জীবনে।
কিন্তু ডাইনোসর? হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সাম্প্রতিক আবিষ্কারে। আর্জেন্টিনায় গবেষকরা সম্প্রতি খুঁজে পেলেন ডাইনোসরের আস্ত ‘বাসা’, সেইসঙ্গে একাধিক জীবাশ্মও।
মুসাউরাস প্যাটাগোনিকাস। আর্জেন্টিনার প্যাটাগোনিয়ায় খুঁজে পাওয়া এই বিশেষ প্রজাতির ডাইনোসরেরই জীবাশ্মই ও বাসস্থানের অবশিষ্টাংশই রীতিমতো সাড়া ফেলে দিল প্যালিয়েন্টোলজিস্টদের মধ্যে। উঠে এল একাধিক অজানা তথ্য। আর্জেন্টিনার ওই প্রত্নক্ষেত্রে এর আগেও সন্ধান মিলেছিল সংশ্লিষ্ট প্রজাতির ডাইনোসরের।
বিক্ষিপ্তভাবে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ৬টি ডাইনোসরের জীবাশ্ম। তবে এবার একই জায়গায় গবেষকরা খুঁজে পেলেন প্রায় ৮০টি সম্পূর্ণ ডাইনো-কঙ্কাল। খুঁজে পাওয়া গেল ১০০টিরও বেশি ডিম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার মধ্যে এখনও অক্ষত অবস্থায় অবশিষ্ট রয়েছে ডাইনোসর ভ্রুণ। যা আগামীদিনে গবেষণায় উল্লেখ্যযোগ্যভাবে সাহায্য করবে বলেই দাবি গবেষকদের।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, মাটির মধ্যে গর্ত করে বাসস্থান তৈরি করত এই ডাইনোসর প্রজাতি। ডিম পাড়া থেকে শুরু করে আহারাদি—সবকিছুই চলত সেখানে। তবে শুধু মুসাইরাস নয়, এই ধরনের জীবনযাপনে অভ্যস্ত আকারে ছোটো একাধিক ডাইনোসর প্রজাতির সন্ধান এর আগেই পেয়েছেন প্যালিয়েন্টোলজিস্টরা।
তবে আনুমানিক ১৫ কোটি বছর আগে সেগুলির বিচরণ ছিল পৃথিবীর বুকে। সাম্প্রতিক নিদর্শন সেই সময় রেখাকে পিছিয়ে দিল আরও ৪ কোটি বছর। সদ্য-আবিষ্কৃত এই নিদর্শনকে এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া প্রাচীনতম সামাজিক যাপনের উদাহরণ হিসাবে ধরে নিচ্ছেন গবেষকরা।
এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে আরও একটি ঘটনা। মুসাউরাস গণের ডাউনোসরদের দেখা মিলত আজ থেকে ২০.৫-২২.১ কোটি বছর আগের ট্রায়াসিক যুগে। তারপরই পৃথিবীতে থাবা বসিয়েছিল গণ অবলুপ্তি। সেই সময়ই অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ব্রন্টোসোরাসের দূর সম্পর্কের আত্মীয়, এই ডাইনোসর প্রজাতি। এমনটাই এতদিন মনে করতেন গবেষকরা।
সাম্প্রতিক আবিষ্কারে ভাঙল সেই ধারণাও। আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলির বয়স ১৯.৩ কোটি বছর। সেইসময় চরম খরায় মৃত্যু হয়েছিল তাদের। ফলত, গণ অবলুপ্তির মুখেও অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখেছিল তারা, সেই তথ্যই উঠে আসছে সুস্পষ্টভাবে। খুলে যাচ্ছে গবেষণার নতুন দিগন্তও। শুধু প্রত্নতাত্ত্বিকরাই নন, প্রাগৈতিহাসিক জীবের এই অজানা রহস্যের পর্দা উন্মোচনে উৎসাহ কম নেই নেটিজেনদেরও।
এসডব্লিউএসএস/২১১৫
আপনার মতামত জানানঃ