লুপ্তপ্রায় প্রাণী ম্যামথের ‘ডিএনএ’ থেকে তৈরি কৃত্রিম মাংসের বৃহত্তম বল উন্মোচন করা হল লেদারল্যান্ডের সায়েন্স মিউজ়িয়ামে। কৃত্রিম মাংস উৎপাদনকারী একটি সংস্থা এই মাংসের বলটি তৈরি করেছে।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা টিম নকস্মিথ বলেন, “আমরা এমন একটি জিনিস আবিষ্কার করতে চাইছিলাম, যা এখনও পর্যন্ত কেউ খাননি।”
তিনি জানান, এই গবেষণায় ‘ম্যামথ’ বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ, লোমশ দাঁতাল দেখতে অনেকটা হাতির মতো প্রাগৈতিহাসিক যুগের এই আফ্রিকান প্রাণীটি একেবারেই অবলুপ্ত।
ভেড়ার দেহের কোষ সংগ্রহ করে, তা ম্যামথের ‘মায়োগ্লোবিন’ জিনের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দানবাকার এই মাংসের বল তৈরি করা হয়েছে। কৃত্রিম মাংসে আসল মাংসের মতো স্বাদ, রং এবং গন্ধ আনতে সাহায্য করে এই মায়োগ্লোবিন।
গবেষকদের মতে, প্রায় ৪ হাজার বছরের পুরনো এই প্রাণীটির প্রোটিন অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এই ধরনের প্রোটিনের গঠন সহজে দেখা যায় না বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। যে হেতু ইউরোপীয় দেশগুলিতে মাংস খাওয়ার চল অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত বেশি, তাই এই খাবারের বিকল্প ভেবে রাখা প্রয়োজন।
বিশ্বের ১৪ শতাংশ গ্রিন হাউজ গ্যাসের সৃষ্টি হয় গবাদি পশু থেকে। অন্যদিকে কার্বন নিঃসরণের এক-তৃতীয়াংশের জন্যই দায়ী খাদ্য উৎপাদন খাত।
প্রতিদিন বিশ্বের কয়েক বিলিয়ন মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া সহজ বিষয় নয়। খাদ্য উৎপাদনের জন্য বন উজাড় থেকে শুরু করে পরিবহন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য মজুদ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে উচ্চ পরিমাণে কার্বন নিঃসৃত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়বে এই কার্বন নিঃসরণ। সেই সঙ্গে জলবায়ু সংকট মোকাবেলাও কঠিন হয়ে পড়বে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বেশ কিছু সময় ধরেই কৃত্রিম উপায়ে দুধ ও মাংস উৎপাদনের চেষ্টা করছেন গবেষকরা। ইতোমধ্যে এ ধরনের বেশ কিছু গবেষণা ইতিবাচক ফল নিয়ে এসেছে।
তবে নতুন ধারার খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় কার্বন নিঃসরণ কমলেও এরসঙ্গে ভোক্তা আচরণেও পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্য শৃঙ্খলের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভাস পরিবর্তনও অপরিহার্য হয়ে পড়বে।
তবে আশার কথা প্রাণীর দেহ থেকে কোষ নিয়ে কৃত্রিমভাবে ল্যাবে উৎপাদিত মাংস খাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জীবন্ত প্রাণীর দেহ থেকে কোষ নিয়ে গবেষণাগারে এ মাংস উৎপাদন করা হয়েছে। সেই মাংস খাওয়ার উপযোগী বলে মতামত দিয়েছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)।
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, গত বছর ১৬ নভেম্বর ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক কোম্পানি আপসাইড ফুডসকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বে পরীক্ষাগারে তৈরি মাংস খাওয়ার অনুমোদন পেল।
জানা গেছে, জীবন্ত প্রাণীর কোষ ব্যবহার করে স্টিলের ট্যাংকে এই মাংস তৈরি করেছে কোম্পানিটি। তবে এটি তৈরি করতে কোনও প্রাণীকে জবাই করার প্রয়োজন হবে না।
এফডিএ বলছে, এটি ল্যাব-উৎপাদিত মাংস বিক্রির অনুমোদন দিতে প্রস্তুত, তবে আরো সতর্কভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। সামুদ্রিক জীব থেকে খাবার তৈরি করতে চায় এমন সংস্থাগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এসডব্লিউএসএস/২০২০
আপনার মতামত জানানঃ