হঠৎ যদি আপনার চিন্তা ভাবনা করার শক্তি হারিয়ে যায়! তবে কী হবে? বা ধরুন কোনো পরীক্ষায় উত্তর দেয়া তো দূরের কথা প্রশ্নগুলো বুঝতেই অক্ষম হচ্ছেন তবে কেমন মনে হবে? আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এমনই হতে চলেছে মানুষের সাথে। কিন্তু কেন মানুষের এই অবস্থা হতে চলেছে সে বিষয়ে জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা।
আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষ আমাদের জীবনে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলছে। বর্তমান প্রযুক্তির সাহায্যে অনেক বেশি তথ্য সংরক্ষণ করতে পারছি আমরা। কিন্তু এতে কি আমরা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য নিজেদের স্মৃতিতে রাখার প্রবণতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি? বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কে সংরক্ষিত এসব তথ্য আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী নিখুঁতভাবে পেয়ে যাচ্ছি।
যেমন আগে আমরা অনেক টেলিফোন নম্বর মনে রাখতাম। এখন মুঠোফোনেই সব রাখা যায়, মনে না রাখলেও চলে। কিন্তু এতে কি আমাদের সহজাত স্মৃতিশক্তির ব্যবহার আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে?
মার্কিন গবেষকরা জানিয়েছেন যে প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহারের ফলে মানুষের চিন্তাভাবনা ও বোঝার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এবং এক দশক বা তার কিছু সময় পরে মানুষের চিন্তা ভাবনা সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে।
আমেরিকার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পিউ রিসার্চে এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় জানা যায় যে প্রযুক্তি নিজেই হয়ে উঠবে মানুষের মনের সবচেয়ে বড় শত্রু। মানুষ প্রযুক্তির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়ার কারণেই এই ঘটনা ঘটবে।
গবেষণা প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা আজ মানুষের জন্য খুবই সুবিধাজনক বিষয় হিসেবে বিবেচিত এই এআই বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলেজেন্সই মানুষের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করবে।
পিউ রিসার্চের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, মাত্র ১২ বছরের মধ্যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে খুব খারাপভাবে প্রভাবিত করবে এবং মানুষ যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হবে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ মেশিন, সিস্টেম ও বটের ব্যবহার খুব দ্রুত বাড়বে। মানুষ তার ছোট-বড় জিনিসের জন্য তাদের ওপর নির্ভর করতে থাকবে এবং তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা একেবারেই লোপ পেতে শুরু করবে।
যুক্তরাজ্যের লেখক ও সাংবাদিক কোরি ডকটর ২০০২ সালে বলেছিলেন, তার ব্লগটি কোনো কারণে হারিয়ে গেলে অর্জিত অনেক জ্ঞান ও স্মৃতিও হারিয়ে যাবে। কারণ, এই ব্লগের সাহায্যে তিনি জীবনের বিভিন্ন ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে মনে করতে পারেন।
একই ধরনের ভয় তো আমাদেরও আছে। ব্যস্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রযুক্তি ও যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষক জেমস গিওর্দানো বলেন, মানুষ এখন কোনো বিষয়ে অস্পষ্ট জ্ঞান রাখে এবং প্রয়োজনমতো সেই জ্ঞান ব্যবহার করে পুরো বিষয়টি জেনে নেয়।
ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধানের মাধ্যম (সার্চ ইঞ্জিন) গুগলের কারণে মানুষের তথ্য সংরক্ষণের সামর্থ্য পরিবর্তন নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
তাদের মতে, এ যুগের মানুষ কোন তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে তা জানে, কিন্তু তথ্যটি জানে না। এ ছাড়া যখন কেউ বুঝতে পারে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় ইন্টারনেটে পাওয়া যাবে, তখন সে বিষয়টি আর মনে রাখার প্রয়োজন মনে করে না।
অনেকেই মনে করেন, অনেক বেশি তথ্যে মস্তিষ্ক ভারাক্রান্ত না করে প্রয়োজনীয় অংশটুকু জেনে বাকিটার জন্য প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতাই ভালো। এতে মস্তিষ্ককে গঠনমূলক চিন্তায় ব্যবহারের সুযোগ থাকে বেশি।
এ ধরনের চিন্তা যাঁরা করেন, তারা মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের স্মৃতির (হার্ডডিস্কের) মতো মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে তো তা নয়। মানুষের স্মৃতি ও কম্পিউটারের স্মৃতির মধ্যে বিস্তর ফারাক। কম্পিউটারের স্মৃতি সংরক্ষণের ক্ষমতা নির্দিষ্ট হলেও মানুষের সেই ক্ষমতা অসীম।
প্রযুক্তির কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ গবেষক বলেন, প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারই একজন মানুষের স্মৃতিশক্তির বিকাশ ও পরিচর্যার বিষয়টি নির্ধারণ করে।
প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির জানা উচিত, তাকে নিজের স্মৃতিতে কোন বিষয়টি রাখতে হবে আর কোনটি বর্জন করতে হবে। আর প্রযুক্তি মানুষের জানার পরিধিকে যে বিশালতা দিয়েছে, তার পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।
এসডব্লিউএসএস/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ