মানবজাতির চোখের বর্ধিত অংশ হয়ে মহাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ছবি তুলছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। সর্বশেষ টেলিস্কোপটি এমন একটি গ্রহের ছবি তুলেছে যার আকাশে রয়েছে বালির মেঘ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, গ্রহটি একটি সূর্যকে কেন্দ্র করে নয় আবর্তিত হয় দুটি সূর্যকে কেন্দ্র করে।
মহাকাশ বিষয়ক সাময়িকী স্পেস ডট কমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রায় পৃথিবীর মতো দেখতে গ্রহটির নাম ভিএইচএস ১২৫৬ বি। এবারে গ্রহটির দুটি সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হওয়ার কথা জানা গেলেও গ্রহটিকে প্রথমবারের মতো দেখতে পাওয়া যায় ২০১৫ সালে। চিলি থেকে যুক্তরাজ্যের তৈরি করা ভিসতা টেলিস্কোপ দিয়ে সে সময় দেখতে পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
ভিএইচএস ১২৫৬ বি গ্রহটির নতুন বৈশিষ্ট্য আবিষ্কারে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ব্রিটানি মাইলস। তার নেতৃত্বে গবেষক দলটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ভিএইচএস ১২৫৬ বি গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে সিলিকেট মেঘের উপস্থিতি দেখতে পান।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন ভিএইচএস ১২৫৬ বি-এর বায়ুমণ্ডলে বালির মেঘের আয়তন পরিবর্তিত হয়, সেগুলো স্থান পরিবর্তন করে। মেঘের ঘনত্বেও পরিবর্তন আসে। গ্রহটিতে বিজ্ঞানীরা কেবল বালির মেঘই নয়, সেখানে পানি, মিথেন গ্যাস এবং কার্বন মনো-অক্সাইডের উপস্থিতির প্রমাণও পেয়েছেন।
নাসার দেয়া তথ্যানুসারে, ভিএইচএস ১২৫৬ বি গ্রহটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০ আলোকবর্ষ দূরে এবং দুটি সূর্যকে সম্পূর্ণভাবে আবর্তন করতে সময় নেয় ১০ হাজার বছর।
গ্রহটির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে ব্রিটানি মাইলস বলেন, ‘প্লুটো আমাদের সূর্য থেকে যে দূরত্বে অবস্থিত ভিএইচএস ১২৫৬ বি তার সৌরজগতের তারা থেকে তার চেয়ে প্রায় ৪গুণ বেশি দূরে অবস্থিত।’ মাইলস আরও বলেছেন, ‘এর বায়ুমণ্ডলের ওপরে সিলিকেট মেঘ রয়েছে এবং এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৮৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
সৌর জগতের বাইরে গত বছর প্রায় আড়াই শ নতুন গ্রহের (এক্সোপ্ল্যানেট) খোঁজ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা। সংস্থাটির পাঠানো জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এসব নতুন গ্রহের খোঁজ দিয়েছে।
এ নিয়ে এক টুইটে নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘চলতি বছরের শুরুতে সৌর জগতের বাইরে গ্রহের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারটি, তবে বছর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩৫টিতে। এর মধ্যে চার শতাংশ গ্রহ পৃথিবী ও মঙ্গলের মতো।
নাসা জানিয়েছে, এসব এক্সোপ্ল্যানেটে পৃথিবীর মতো ছোট রুক্ষ পাথুরে পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। অনেক এক্সোপ্ল্যানেটের আয়তন আমাদের পৃথিবীর তুলনায় কয়েক গুণ বড় হয়। তাদের আবার বলা হয় ‘সুপার আর্থ’।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বিজ্ঞানীদের এক্সোপ্ল্যানেট অনুসন্ধানে নতুন মাত্রা এনেছে। মহাকাশে পাঠানো সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপটি গত বছরের জুলাই থেকে ছবি পাঠানো শুরু করেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ