বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। উদার গণতান্ত্রিক সূচক ও নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশে ইলেকটোরাল অটোক্রেসি বা নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র বিরাজ করছে।
গণতন্ত্রের জায়গায় স্থান করে নিচ্ছে স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা। উদার গণতান্ত্রিক সূচক ও নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান গত বছরের তুলনায় এক ধাপ পিছিয়ে ১৪৭তম স্থানে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত সুইডেনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি’র (ভি-ডেম) ‘ডিফাইঅ্যান্স ইন দ্য ফেস অব অটোক্রাটাইজেশন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৭ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের মানের সমীক্ষা প্রকাশ করে আসছে সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি-ডেম ইনস্টিটিউট। সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক পরিবেশ, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ নানা গণতান্ত্রিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উদার গণতান্ত্রিক সূচকে ০.১১ স্কোর করে পৃথিবীর ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম। গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬তম। গতবারের চেয়ে এবার স্কোর ০.০২ কমেছে। নির্বাচনী গণতান্ত্রিক সূচকে ০.২৮ স্কোর করে বাংলাদেশ বর্তমানে ১৩১তম অবস্থানে রয়েছে।
আগের বছরের তুলনায় স্কোর ০.০৩ কমেছে। বাংলাদেশ উদার উপাদান সূচকে ১৫৫তম, সমতার উপাদান সূচকে ১৬৫তম, অংশগ্রহণমূলক উপাদান সূচকে ১৪২তম, সিদ্ধান্তমূলক উপাদান সূচকে ১৪৫তম অবস্থানে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭২ শতাংশ, ৫.৭ বিলিয়ন মানুষ ২০২২ সাল নাগাদ স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে ছিল, ২০১২ সালে যা ছিল ৪৮ শতাংশ। ১০ বছরের ব্যবধানে যা ২৪ শতাংশ বেড়েছে। আর বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করে। উদার গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২।
শাসনতান্ত্রিক দিক থেকে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র ক্যাটাগরিতে, যেখানে স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা স্থান করে নিচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের সাথে ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া ও তুরস্কসহ আরও ৫৫টি দেশকে নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে।
এদিকে, উদার গণতান্ত্রিক সূচকে ভারতের অবস্থান ৯৭তম। নির্বাচনী গণতন্ত্রের সূচকে ১০৮তম। এই দুই ক্যাটাগরিতে ভারতের অবস্থান পিছিয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী উদার গণতান্ত্রিক সূচকে ভারতের প্রায় ২৩ শতাংশ অবনতি হয়েছে। গত দশ বছরে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে আকস্মিক পতনের মধ্যে এটি অন্যতম। বিপন্ন গণতন্ত্র, গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যে নিষেধাজ্ঞা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা পতনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে ১৩০ কোটি নাগরিকের দেশ ভারত নির্বাচনী স্বৈরাচারের দেশে পরিণত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে একই তালিকায় রয়েছে হাঙ্গেরি ও তুরস্ক। ভি-ডেমের প্রতিবেদনে উদার গণতান্ত্রিক সূচকে শীর্ষ তিন স্থানে আছে যথাক্রমে ডেনমার্ক, সুইডেন ও নরওয়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৩৫টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবনতি ঘটেছে। দশ বছর আগে এটি ছিল মাত্র সাতটি দেশে। গণমাধ্যমের ওপর সরকারি সেন্সরশিপ গত দশ বছরে বেড়েছে ৪৭টি দেশে। সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাগুলির ওপর সরকারি দমন-পীড়ন বেড়েছে ৩৭টি দেশে।
বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০টি দেশে নির্বাচনের মান খারাপ হচ্ছে। মায়ানমার, চীন, উত্তর কোরিয়া এবং ইরানসহ ৩৩ টি দেশকে ক্লোজড স্বৈরতন্ত্র ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। ৩২ টি দেশকে রাখা হয়েছে উদার গণতান্ত্রিক ক্যাটাগরিতে আর নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে ৫৮ টি দেশকে।
সুইডেনের বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্ট্যাফান লিন্ডবার্গ ২০১৪ সালে ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর বিশ্বের ২০২টি দেশের ৩ কোটি ডেটা পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রের মান প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
এসডব্লিউএসএস/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ