ওষুধ প্রতিরোধী ফাঙ্গাস বা ছত্রাক, নাম ক্যানডিডা বা সি. অরিস, আবিষ্কৃত হয়েছিলো মাত্র ১০ বছর আগে। কিন্তু তারপরও হাসপাতালে থাকা অণুজীবের মধ্যে এখন বিশ্বের সবচেয়ে আতঙ্কজনক নামগুলোর মধ্যে একটি ক্যানডিডা অরিস।
বিশ্বজুড়ে এই ফাঙ্গাসের আক্রমণে মহামারি দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে। গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এর সংক্রমণের হার।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি বলছে, এর ঝুঁকি কমাতে হলে, এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা রয়েছে তা জানতে হবে।
তবে আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোমে থাকেন, এবং চিকিৎসার কারণে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয় তাহলে সি. অরিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক সি. অরিসের সংক্রমণরোধী ভাল ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে।
ক্যানডিডা অরিস কী?
ক্যানডিডা অরিস বা সি. অরিস হচ্ছে এক ধরণের ইস্ট বা ফাঙ্গাস বা ছত্রাক যা মানব দেহে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। সাধারণ ছত্রাক যেমন ক্যানডিডা অ্যালবিকান্সের মতো মুখ ও গলায় ক্ষত তৈরির মতো সংক্রমণ তৈরি করে এটি।
২০০৯ সালে জাপানে টোকিও মেট্রোপলিটন গেরিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর কানের ভেতর প্রথম পাওয়া যায় এই ছত্রাক।
বেশিরভাগ সময়ই ক্যানডিডা ছত্রাক আমাদের ত্বকে কোন ধরণের ক্ষতি না করেই বসবাস করে।
তবে আমরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি কিংবা সংবেদনশীল কোন স্থান যেমন রক্তস্রোত কিংবা ফুসফুসে চলে গেলে এটি সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
কী ধরণের অসুস্থতা তৈরি করে এটি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সি. অরিস মানব দেহে রক্তপ্রবাহে সংক্রমণ তৈরি করে। এছাড়া নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ এবং ত্বকেও সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
এর সংক্রমণ বেশ মারাত্মক। সারা বিশ্বে,যারা সি. অরিসের সংক্রমণে আক্রান্ত হন তাদের ৬০ ভাগই মৃত্যুবরণ করেন। এই ছত্রাক সাধারণত ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় এর সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে।
এছাড়াও, অনেক সময়ই সি. অরিসের সংক্রমণকে অন্য কোন অসুস্থতা বলে ভুল করা হয়। যার কারণে দেয়া হয় ভুল চিকিৎসা।
তার মানে হচ্ছে, এর ফলে রোগীকে হয় বেশিদিন ধরে চিকিৎসা নিতে হবে অথবা তার অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে পড়বে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ প্র্যাকটিশনার ও ইউসিএল ক্লিনিক্যাল লেকচারার ডা. এলাইন ক্লাউটম্যান-গ্রিন বলেন, “যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু হাসপাতালে এই ছত্রাকের সংক্রমণ মহামারি আকারে দেখা দেয়ায় পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের কাছে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “হাসপাতালের পরিবেশে বেঁচে থাকে সি. অরিস। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন তাই এর সংক্রমণ সনাক্ত হলে তা রোগী এবং হাসপাতাল উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।”
ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় সংক্রমণ পরিসেবা বিভাগের মেডিক্যাল অণুজীববিজ্ঞানী ডা. কলিন ব্রাউন দাবি করেন, “জাতীয় স্বাস্থ্য পরিসেবা বিভাগের আওতায় যেসব হাসপাতালে সি. অরিসের সংক্রমণ অতিমাত্রায় দেখা দিয়েছে, সেসব হাসপাতালগুলোতে আসলে এই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি।”
তিনি বলেন, “সি. অরিসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষজ্ঞ মতামত ও সংক্রমণ প্রতিরোধী নানা ব্যবস্থার বিষয়ে সহায়তা দিতে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাথে জনস্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে।”
এসডব্লিউএসএস/১৮১০
আপনার মতামত জানানঃ