বিশ্বের সবচেয়ে সুদীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস মিশরের। সভ্যতার প্রাচীন যুগের ইতিহাস পড়তে গেলে যে দেশের নাম সবার আগে আসে তা হলো পিরামিডের দেশ মিশর। আদিযুগ থেকেই সেখানে এক আশ্চর্য সভ্যতা তৈরি হয়েছিল। যা এখনো ঐতিহাসিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ, স্থপতিদের অবাক করে।
প্রাচীন মিশরীয়দের জীবন যাপন প্রক্রিয়া ছিল বেশ রহস্যময়। তারা মৃত্যুকে অধিক ভয় করত, ভাবত মৃত্যুর পরেও জীবন রয়েছে। এজন্য গড়ত পিরামিড, তাতে রাখা হত মমি করা মৃতদেহ। সঙ্গে দেয়া হত মহামূল্যবান সব সম্পদ। এছাড়াও তারা বিশ্বের অন্যদেরকে নিজেদের চেয়ে তুচ্ছ বলে ভাবত।
শ্রেণিবিভেদ কড়াকড়িভাবে মানা হত প্রাচীন মিশরীয় সমাজে। নিম্ম শ্রেণিরা সবসময় নিযুক্ত থাকত উচ্চ শ্রেণির সেবার কাজে। আগের পর্বগুলোতে মিশরীয় সভ্যতার নানা বিষয় সম্পর্কে জেনেছেন। আজ থাকছে পঞ্চম পর্ব। মিশরীয়দের অদ্ভূত দেবতা ভক্তি, উৎসব, খাদ্য এবং পোশাক সম্পর্কিত চমকপ্রদ সব তথ্য-
মিশরীয়রা সব দেব-দেবীর জন্মদিন পালন করত। তাদের মধ্যে এতোটাই দেব-দেবী ভক্তি ছিল যে, মৃত্যুর পরও মমির পাশে দেব-দেবীর প্রতিকৃতি স্থান পেত পিরামিডে। ফারাওরা বিভিন্নভাবে দেব-দেবীর সম্মানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করত।
নতুন শিশু জন্মালে বা মৃতের অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার আচার অনুষ্ঠান পালিত হত। যদিও উপলক্ষ অনুযায়ী অনুষ্ঠানের রীতিনীতির ভিন্নতা ছিল। তবে সব অনুষ্ঠানেই সুরাপান এবং ভোজের ব্যবস্থা থাকত। অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে প্রাচীন মিশরীয়রা কালো পোশাক পরত। তবে পুরোহিতরা সাদা পোশাক পরত। জন্মদিন এবং অন্যান্য উৎসবে ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো রঙের পোশাক ব্যবহার করতে পারত।
থিবেসে আমুন দেবতার সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান পালিত হত। মেম্ফিসের দেন্দেরায় হাথর দেবী, ইসিস দেবীর সম্মানে বুসিরিসে এবং বাস্তেস দেবীর সম্মানে বুবাস্তিসে অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হত। এই সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান সাধারণত চন্দ্র বছরের দিনপঞ্জি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হত। ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাদেও প্রাচীন মিশরে অন্যান্য উৎসব পালিত হত। যেগুলো তাদের প্রচলিত সংস্কৃতির অংশ ছিল। বাস্তেত দেবীর অনুষ্ঠানে মেয়েরা পরত শুধু ছোট একটা কিল্ট।
তিন হাজার বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে মিশরে পৌরাণিক ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। মিশরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তার পুরানও বিবর্তিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই পৌরাণিক চরিত্রগুলোকে যুগ ভেদে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়। পৌরাণিক ধর্মে মূলত- বহু দেব-দেবীর অস্তিত্ব ছিল। মিশরতত্ত্ববিদ জেমস পি অ্যালেন অনুমান করেন যে মিশরীয় গ্রন্থে প্রায় ১৪০০ টিরও বেশি দেবতাদের।
তবে প্রাচীন সাম্রাজ্যের কালে আখেনআতেনের (চতুর্থ আমেনহোতেপ) শাসনামলে কিছুকালের জন্য সূর্যদেব আতেনকে কেন্দ্র করে একেশ্বরবাদ চর্চা করতে দেখা যায়। তবে আখেনআতেনের মৃত্যুর সঙ্গে এই চর্চাও লোপ পায়। পুনরায় মিশরবাসী আগের বহু দেব-দেবী সম্বলিত পৌরাণিক ধর্ম চর্চা করতে থাকে।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, দেবতাকে তুষ্ট করতে প্রাচীন মিশরীয় পুরুষরা নীলনদে গিয়ে মাস্টারবেশন বা বীর্যদান করতেন। মিশরীয়রা মনে করতেন, দেবতা অটাম স্বমেহনের মাধ্যমে বিশ্বকে সৃষ্টি করেন। আর নীল নদও এভাবেই সৃষ্টি। আর সেই কারণে তখনকার ফারাওদের নীলনদে বছরের একটি বিশেষ সময়ে হস্তমৈথুন করাটা বাধ্যতামূলক ছিল।
সেই সময় দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে ফারাওরা নীলনদের ধারে উপস্থিত হতেন। বিভিন্নরকমের অনুষ্ঠানের সঙ্গে পূজা পাঠের আয়োজন করা হত। নীলনদের ধারে হাজির হয়ে নিজেদের সমস্ত পোশাক-পরিচ্ছদ খুলে ফেলতেন ফারাওরা। আর তখনই দেবতা অটামকে খুশি করতে নীলনদে বীর্যদান করতেন তারা।
এতে নীলনদের জলধারা বজায় থাকবে এই বিশ্বাসের পাশাপাশি তারা মনে করতেন এতে চাষাবাদও খুব ভালো হবে। মিশরের বিভিন্ন শিলালিপিতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন প্রাচীন ছবিতেও এর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। পিরামিডের গায়েও এই নিয়ে ছবি দেখা যায়।আসলেই এই বিষয়টি হাজারো রহস্যের জন্ম দেয়।
তবে মিশরের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, প্রাচীন মিশরে পুরুষের স্বমেহনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হত। কেননা তাদের ধারণা ছিল, মিশরীয় দেবতা অটাম স্বমেহন করার নিরিখেই নীলনদের জলস্রোত চালিত হয়। তবে এই প্রথা এখন অবলুপ্ত।
এসডব্লিউএসএস/১২১১
আপনার মতামত জানানঃ