ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল অভিযোগের প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এই আদেশ দেন। আগামী ১০ এপ্রিল এই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদালত বলেন, দুদকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেওয়া হবে কি না।
ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষে সমিতির সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকারের দায়ের করা মামলায় এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় অন্য যারা আসামি তারা হলেন—ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর, সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক মিঞা মো. মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান, রাজস্ব পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন, প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম, জনতা ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম শ্যামল বিশ্বাস, উপসচিব শেখ এনায়েত উল্লাহ ও উপপ্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালেকুর রহমান।
আজ মামলার বাদীর দেওয়া অর্থ আত্মসাৎসংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করতে গিয়ে আদালত বলেন, দুদকে কী কাগজপত্র আছে বা এ-সংক্রান্ত কী কী অভিযোগ আছে তা আগে জানা প্রয়োজন। পরে তিনি দুদকের প্রতিবেদন তলব করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী গাফফার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বছর ১০ নভেম্বর এই মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত আজ শুনানির জন্য দিন ধার্য করে বাদীকে অভিযোগের স্বপক্ষে কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বাদী অভিযোগসংক্রান্ত নথিপত্র আদালতে দাখিল করেন। এই আইনজীবী জানান, গত বছর ২ আগস্ট দুদকে বাদী অভিযোগ দিয়েছিলেন। দুদক কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরে তিনি আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। তখন আদালত দুদকে যে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন তলব করেন।
গাফফার হোসেন আরও বলেন, দুদকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেওয়া হবে কি না।
মামলার আরজিতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ঢাকা ওয়াসা থেকে রাজস্ব আদায় কাজ বাবদ ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা পায়। আর ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ অর্থবছরে এ কাজ থেকে সমিতি আয় করে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টাকা।
এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৮ অর্থবছরে সমিতির হিসাবে জমা হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা। বাকি ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে আসামিরা ‘আত্মসাৎ’ করেছেন এবং সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টেও তা ‘প্রমাণিত’ হয়েছে বলে দাবি করা হয় আর্জিতে।
এছাড়া আসামিরা সমিতির গাড়ীসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সমিতির হেফাজত থেকে স্থানান্তর করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সম্পদ ‘চুরি করেছেন’ বলে আর্জিতে অভিযোগ করা হয়।
আসামিদের এই আত্মসাতের বিষয়টি সমবায় অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিশ্বাসভঙ্গ করে অর্থ আত্মসাৎ ও চুরি করেছেন বলে দণ্ডবিধির ৩৮০ / ৪২০ / ৪০৯/ ৫০৬ / ১০৯ ধারায় ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনেন বাদী।
গত বছর একই অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই বাদী মামলা দায়ের করেছিলেন। তখন মামলাটি উত্থাপন করা হলে আদালত মামলাটি গ্রহণ না করে ফেরত দেন।
আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হলে, তা দুর্নীতি দমন কমিশনের শিডিউলভুক্ত অপরাধ। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ মামলা করতে পারেন না এবং এমন মামলা গ্রহণের এখতিয়ার আদালতের নেই।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) গত ২৫ অগাস্ট তাকসিম এ খানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি দেয়।
এর মধ্যেই দৈনিক সমকাল এ বছর জানুয়ারির শুরুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!’ ওই প্রতিবেদন নজরে আনা হলে হাই কোর্ট দুদককে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
এরপর ১০ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে এসে তাকসিম এ খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৪টি বাড়ির যে খবর পত্রিকায় বেরিয়েছে, সেটা ‘সর্বৈব মিথ্যা’।
“যে ১৪টি বাড়ির কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটি বাড়িতে আমার পরিবার সেখানে বিভিন্ন সময় ভাড়া থেকেছেন। আর একটি বাড়ি আমার স্ত্রীর নামে। আমি, আমার স্ত্রী, সন্তান সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।”
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত নিয়ে ওয়াসার এমডির ভাষ্য, “ঢাকা ওয়াসার ভালো কাজ দেখে যাদের ক্ষতি হয়, তারাই এমন অভিযোগ করেন। আমি জীবনে হারাম পয়সা খাইনি। খাবো না। ঢাকা ওয়াসার এমডি পদের চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছি বহুবার। আমাকে অনুরোধ করে রাখা হয়েছে।”
এসডব্লিউএসএস/১৮১৫
আপনার মতামত জানানঃ