বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আবারও বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় লোকজনের চলাফেরার মধ্য দিয়ে যেন ভাইরাসটি ব্যাপক হারে না ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেটি নিশ্চিত করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, টিকা নেয়ার পর আর মানুষকে আটকে রাখা যাবে না। অনেকেই হয়ত দীর্ঘদিনের বন্দিদশা কাটিয়ে আবার আগের মতো বেড়ানো, কেনাকাটা কিংবা সিনেমায় যাওয়ার জন্য ছুটবেন।
কিন্তু কে টিকা নিয়েছে, আর কে নেয়নি, তা ঠিক হবে কিভাবে? এই সংকটের সমাধানে কাজ চলছে। বাইরে বের হলেই সঙ্গে টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র রাখতে হবে সবাইকে, যাকে বলা হচ্ছে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’। টিকা গ্রহণের সমস্ত তথ্য নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড করলেই পাওয়া যাবে এই পাসপোর্ট। বাংলাদেশেও তাই যারা টিকা নেবেন, তাদের টীকা গ্রহণের সমস্ত তথ্য ও তার ডিজিটাইজড কপি সংরক্ষণের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ডিজিটাল পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করবে এই অ্যাপ; যেটি কনসার্ট ভেন্যু, স্টেডিয়াম, সিনেমা হল, অফিস-আদালতে প্রবেশের সময় এমনকি বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষকে দেখানো যাবে। ভ্রমণ তো বটেই, আরও নানাক্ষেত্রে দেখানোর প্রয়োজন পড়বে এই প্রমাণপত্র।
এ প্রক্রিয়া সহজ করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট অ্যাপ’ তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি স্মার্টফোন অ্যাপ উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। যেখানে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সব তথ্য আপলোড করা যাবে।
জেনেভাভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দ্য কমন প্রজেক্ট ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের উদ্যোগে গঠিত দ্য কমন ট্রাস্ট নেটওয়ার্ক বেশ কিছু এয়ারলাইনস এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও আরুবা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় কমনপাস নামের একটি অ্যাপ এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা কভিড-১৯ পরীক্ষা, টিকা গ্রহণের প্রমাণ হিসেবে হাসপাতাল বা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া সনদপত্রসহ নানা স্বাস্থ্য তথ্য আপলোড করতে পারবেন।
বলা হচ্ছে অ্যাপটি টিকা গ্রহণ সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য নিয়ে এ সম্পর্কিত সনদের কিউআর কোড জেনারেট করবে। তবে এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনো সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হবে না। ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই কিউআর কোড প্রদর্শন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে।
এ সম্পর্কে ‘দ্য কমন প্রোজেক্ট’ এর প্রধান বিপণন ও যোগাযোগ কর্মকর্তা থমাস ক্র্যাম্পটন সিএনএন বিজনেসকে বলেন, “আপনি যতবারই কোনও দেশের সীমানা অতিক্রম করবেন ততবারই আপনার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা সম্ভব হলেও প্রতিবার এর টিকা নেওয়া সম্ভব না। তাই টিকা গ্রহণের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বিনিময়ের একটি সহজ ব্যবস্থা থাকা বা একটি ‘ডিজিটাল ইয়োলো কার্ড’ থাকা জরুরি; যেটি আপনার টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র হিসাবে কাজ করবে।”
আইবিএমের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও একই ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। আইবিএম এরই মধ্যে ‘ডিজিটাল হেলথ পাস’ নামে নিজস্ব একটি অ্যাপ তৈরি করেছে। বিভিন্ন কোম্পানি, অনুষ্ঠানের ভেন্যু কর্তৃপক্ষ ও আয়োজকেরা কোনও ইভেন্টে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস পরীক্ষা, তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং টিকা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যতথ্য এতে সংরক্ষিত রাখতে পারবে।
ধারণা করা হচ্ছে, ইন্টারনেটের সূত্রে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে যাবে। বাংলাদেশও অচিরেই এই ভ্যাকসিন পাসপোর্টের কার্যক্রমের আওতায় চলে আসবে। নাগরিকদের তাই শুরু থেকেই টিকা গ্রহণের সমস্ত তথ্য সংরক্ষণ ও তার ডিজিটাইজড কপিও তৈরি করে রাখা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাহলে ভ্রমণ বা দেশের বাইরে যেতে হলে ডিজিটাইজড এসব তথ্য দ্রুতই সরবরাহ করা যাবে এবং তাতে করে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট প্রাপ্তিও সহজ হবে।
এসডাব্লিউ/বিডি/আরা/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ