মানুষের ইন্দ্রিয় পাঁচটি। চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক। কিন্তু মানুষের আরেকটি ইন্দ্রিয়ও আছে, যাকে গবেষকেরা এতোদিন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে আসছেন। যা দেখা যায় না, ছোঁয়াও যায় না; শুধু অনুভব করা যায়। এর অবস্থান কোথায় এতদিন তাও ছিল অজানা। এবারে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে এবার মানুষের মধ্যে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যার মাধ্যমে পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে অনুভব করতে পারে মানুষ।
পৃথিবীকে শুধু বায়ুমণ্ডল ঘিরে রাখেনি, আছে আরও একটি বর্ম, যা খালি চোখে দেখা যায় না৷ সেটা হলো চৌম্বক ক্ষেত্র৷ পৃথিবীর উপর ক্রমাগত আঘাত হেনে চলেছে কসমিক পার্টিকল বা মহাজাগতিক কণা৷ সূর্য থেকে সেই কণা ধেয়ে চলেছে মহাকাশের দিকে৷ আমাদের গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র সেই ধাক্কা সামলাচ্ছে৷ এই বলয় না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বই থাকতো না৷
আগে ধারণা করা হতো, বিশেষ ধরনের মাছি ফ্রুট ফ্লাই, সামুদ্রিক প্রাণী স্যামন সহ অনেক প্রাণীই পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র অনুভব করতে পারে। এমনকি অনেক প্রাণী এর মাধ্যমে অনেক দূরদুরান্তেও যেতে দিক নির্ণয় করতে পারে।
কিন্তু মানুষের পক্ষে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বুঝতে পারা সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধারণাকেই এবার চ্যালেঞ্জ করে ই-নিউরোতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের নতুন এক গবেষণায় তারা খুঁজে পেয়েছেন যে মানুষের মস্তিষ্কও পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বিষয়ে সাড়া ও এর ব্যবহারিক প্রয়োগও আছে।
অনেকেই এই পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে কোনো কম্পাস ছাড়াই দ্রুত উত্তর-দক্ষিণ নির্ধারণ করতে পারে। আর একেই তারা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হিসেবে অভিহিত প খবর নিউইয়র্ক পোস্টের।
এই সংক্রান্ত গবেষণা দলের নেতা প্রফেসর জোসেফ কিরশভিঙ্ক বলেছেন, ‘আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে মানুষের চুম্বকত্ব শনাক্তের জন্য মানুষের একটি নির্দিষ্ট ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে। এই সংবেদনশীল পদ্ধতি পুরোপুরি বাস্তব, কেন কিছু মানুষের অন্যান্যদের তুলনায় দিক চেনার ক্ষমতা থাকে, তা ব্যাখ্যা করতে পারে।’
গবেষণায় আমেরিকার পাশাপাশি জোসেফের সঙ্গে কাজ করেছেন জাপানের সহকর্মীরাও। গবেষণার কাজে তারা ছয় দিকে অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে আবদ্ধ বক্স ব্যবহার করে। এই বক্সগুলোর ভেতরে পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র কাজ করে না। সেখানে ৩৪ জন স্বেচ্ছাসেবী পুরুষ ও নারীকে প্রবেশ করায়।
পরে দেখা যায়, তাদের মধ্যে মস্তিষ্কের আলফা ব্রেইন ওয়েভ নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। জোসেফ বলেন, মূলত, চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় তাদের মস্তিষ্ক বিচলিত হয়ে পড়েছিলো।
উল্লেখ্য, এর আগে নেদারল্যান্ডসের গবেষকেরা দাবি করেছিল, মানুষের মস্তিষ্কের একটি অঞ্চলে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কার্যক্রম চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। ‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এ গবেষণার তথ্য। নেদারল্যান্ডসের ইউট্র্যাক্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা আটজন ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন।
গবেষণার সময় এতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তনশীল বিন্দুর অবস্থান বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছিল। এসময় গবেষকেরা তাঁদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। এতে প্রত্যেকের মস্তিষ্কের একটি মানচিত্র পান তাঁরা। গবেষকেরা এর নাম দেন ‘টপোগ্রাফিক্যাল ম্যাপ’।
গবেষকেরা দেখেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সংখ্যার ধারণা বা পূর্বানুমানের বিষয়টি কাজ করেছে। গবেষকেদের দাবি, তাঁরা মস্তিষ্কের যে মানচিত্রটি পেয়েছেন সে অঞ্চলটিই মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বা অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি তৈরি করে।
প্রচলিত ধারণা, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টি সাধারণত বিশেষ বিশেষ কিছু লোকের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। বিশেষ মুহূর্ত ছাড়া ওইসব লোকের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দেখা যায় না। অতিরিক্ত ইন্দ্রিয়ের অধিকারী ব্যক্তিরা তার ‘তৃৃতীয় চক্ষু’ দ্বারা অদৃশ্য বস্তুকে অতি সহজেই দেখতে পারেন। অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের চেয়ে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টি অধিক জটিল ও কদাচিৎ তুলনাযোগ্য থাকে।
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টি পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে গঠিত। এই ইন্দ্রিয়গুলো হলো—টেলিপ্যাথি, সাইকোমেট্রি, ক্লিয়ার ভয়েস, রিকগনিশন ও প্রিকগনিশন। টেলিপ্যাথি মৌখিক ও লিখিত ছাড়াই লিখতে ও ভাবতে সাহায্য করে। সাইকোমেট্রি মানুষের ইতিহাস ও ব্যক্তিগত তথ্য জানতে সহায়তা করে। ক্লিয়ার ভয়েস অদৃশ্য বিষয় দেখতে সহায়তা করে। রিকগনিশন মানুষের অতীত জানতে সহায়তা করে। অবশিষ্ট প্রিকগনিশন ভবিষ্যতে কী হবে বা করতে হবে, তা জানতে সহায়তা করে।
এসডব্লিউএসএস/১৯২১
আপনার মতামত জানানঃ