৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে হিমায়িত ভ্রূণ থেকে জন্ম নিয়েছে যমজ শিশু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যে গত ৩১ অক্টোবর শিশু দুটোর জন্ম হয়। খবর বিবিসির।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ২২ এপ্রিল মাইনাস ১২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার তরল নাইট্রোজেনে ভ্রুণগুলো সংরক্ষণ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরোনো হিমায়িত ভ্রুণ থেকে জন্মদানের নতুন রেকর্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এমব্রায়ো ডোনেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ওই দম্পতির ঘরে গত ৩১ অক্টোবর জন্ম নেয় লিডিয়া ও টিমোথি। তারা সবচেয়ে দীর্ঘ সময় হিমায়িত থাকা ভ্রুণ।
আগের রেকর্ড অনুযায়ী, ২৭ বছর ধরে হিমায়িত থাকা ভ্রূণ থেকে ২০২০ সালে জন্ম নেয় মলি গিবসন। সেই ছিল এর আগের সবচেয়ে বেশি দিন হিমায়িত থাকা ভ্রূণ। মলির আগে তার বোন এমার জন্মও হয়েছিল হিমায়িত ভ্রূণ থেকে। এমার ভ্রূণ ২৪ বছর হিমায়িত ছিল।
৩০ বছর পর আইভিএফ পদ্ধতিতে ভ্রুণগুলো গর্ভে ধারণের মাধ্যমে যমজ সন্তানের মা-বাবা হলেন অরিগন রাজ্যের র্যাচেল রিজওয়ে ও তাঁর স্বামী ফিলিপ রিজওয়ে। রিজওয়ে দম্পত্তির ইতোমধ্যেই চারটি সন্তান আছে। দুই যমজ সন্তানের নাম লিডিয়া অ্যান রিজওয়ে ও টিমোথি রোনাল্ড রিজওয়ে রেখেছেন তারা।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঘটনাটিকে অবিশ্বাস্য মন্তব্য করে সদ্য বাবা হওয়া ফিলিপ বলেন, ‘আমার বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখনই ঈশ্বর লিডিয়া ও টিমোথিকে জীবন দিয়েছিল। সেই হিসেবে আমাদের ছয় সন্তানের মধ্যে লিডিয়া ও টিমোথি সবার বড়। অথচ ওরাই আমাদের সর্বকনিষ্ঠ শিশুসন্তান। এসব চিন্তা করলেও ভীষণ অদ্ভুত লাগে’।
ফিলিপ আরও বলেন, ‘আমার আগের চারটি সন্তান রয়েছে। তাদের বয়স ৮, ৬, ৩, ২ বছর। তারা কেউই আইভিএফ বা কোনো ডোনার থেকে নেওয়া নয়। তবে লিডিয়া ও টিমোথি সবার বড়। যদিও ভ্রূণ অবস্থায় হিমায়িত থাকায় তারা এখন সবার ছোট। পরিবার বড় করতেই আমরা দীর্ঘদিনের হিমায়ত ভ্রূণ থেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’
র্যাচেল জানান, তারা ন্যাশনাল এমব্রায়ো ডোনেশন সেন্টারে গিয়ে জানতে পারেন, সেখানে ১৯৯২ সালের ২২ এপ্রিল থেকে একটি ভ্রূণ সংরক্ষিত রয়েছে। তবে ভ্রূণদাতার নাম অজানা।
ফিলিপ-র্যাচেল দম্পতি তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন, ভ্রূণটিকে তাঁরা পৃথিবীর আলো দেখাবেন। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রূণ নেওয়ার ঘটনা নতুন না হলেও ৩০ বছরের পুরনো ভ্রূণ থেকে সন্তান জন্ম দেওয়ার ঘটনা প্রথম।
চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর অবশেষে পৃথিবীর আলো দেখেছে সেই ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া দুই শিশু লিডিয়া ও টিমোথি। সন্তান দুটি জন্ম নেওয়ার পর উচ্ছ্বসিত ফিলিপ সাংবাদিকদের বলেছেন, পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা খুব উত্তেজনার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে পুরনো ভ্রূণ থেকে শিশুর জন্ম দিয়ে কোনো রেকর্ড গড়ার ইচ্ছা আমাদের ছিল না।
দান করা ভ্রুণ থেকে এর আগে ১,২০০ শিশুর জন্ম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এমব্রায়ো ডোনেশন সেন্টার (এনইডিসি)। এর আগে ২০২০ সালে তাদের ২৭ বছরের পুরোনো একটি ভ্রুণ থেকে মলি গিবসন নামে একটি শিশুর জন্ম হয়।
র্যাচেলের গর্ভে ভ্রুণ প্রতিস্থাপনকারী চিকিৎসক জন ডেভিড গরডন জানান, ‘৫, ১০ বা ২০ বছর আগে সংরক্ষিত ভ্রুণ থেকে সন্তান নেওয়ার বিষয়ে যারা সন্দিহান থাকেন, তাদের আশ্বস্ত করবে এই ঘটনা’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতির জন্য আইভিএফের মাধ্যমে সন্তান গ্রহণে যমজ এই ভ্রুণ দুটো তৈরি করা হয়েছিল। ভ্রুণটি ৫০ বছর বয়সী এক পুরুষের দান করা শুক্রাণু ও ৩৪ বছর বয়সী নারীর দান করা ডিম্বাণু থেকে তৈরি করা হয়।
২০০৭ সাল পর্যন্ত দত্তক নেওয়া দম্পতি ভ্রুণটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট কোস্টের একটি ফার্টিলিটি ল্যাবে সংরক্ষণ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সন্তান না নিয়ে তারা এই ভ্রুণ দুটো টেনেসির অপর এক দম্পতির জন্য এনইডিসিকে দান করেন।
চলতি বছরের শুরুতে এনইডিসির সহযোগী ক্লিনিক সাউদইস্টার্ন ফার্টিলিটিতে সন্তানলাভে আগ্রহী র্যাচেলের গর্ভে ভ্রুণগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়।
এক বিবৃতিতে এনইডিসি জানিয়েছে তাদের আশা এই ঘটনায় অনেক দম্পতিই নিজেদের জন্য ভ্রুণ দত্তক নিতে আগ্রহী হবেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ