তরুণ বয়সে কিছু একটা নিয়ে কষ্ট পেয়েছিলেন। সেই কষ্ট থেকে ৬০ বছর গোসল করেননি আমু হাজি নামে ইরানের এক ব্যাক্তি। তিনি সন্নাসী গোছের মানুষ ছিলেন। তার গোসল না করার ঘটনা ২০১৪ সালে জানাজানি হয়। এরপর তাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা মানুষের’ তকমা দেওয়া হয়েছিল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আইআরএনএ জানিয়েছে, ৬০ বছর গোসল না করা সেই ব্যাক্তি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪। কয়েক মাস আগে কয়েকজন মিলে তাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেন। এর কয়েক মাস পরেই মৃত্যুবরণ করলেন তিনি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, যৌবনে মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলেন আমু হাজি। এরপর থেকে তিনি ভয় পেতেন, গোসল করলেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
আর এ ভয়ের কারণে ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে শরীরে পানি দেননি। আর সাবানও ব্যবহার করতেন না। এ জন্য তাকে ‘বিশ্বের নোংরাতম মানুষ’ বলা হতো।
বিয়ে থা–ও করেননি। কয়েক মাস আগে গ্রামবাসীরা তাকে প্রথমবারের মতো গোসল করিয়ে দেন। গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমু।
২০১৩ সালে আমু হাজির জীবন নিয়ে, ‘দ্য স্ট্রেঞ্জ লাইফ অব আমাউ হাজি’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিল। সেই তথ্যচিত্রে বলা হয়, গোসল না করা হাজি বাস করতেন একটা ঝুপড়িতে।
আমু হাজির মতো আরও এক ব্যক্তি আছে ভারতে। ভারতের গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের ২০০৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, উত্তর প্রদেশের বারানসীর বাসিন্দা ‘কৈলাস সিং’-ও জীবনের বেশিরভাগ সময় গোসল না করে আছেন।
দেশের সব সমস্যার অবসান ঘটানোর চেষ্টায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শরীরে পানি লাগাননি। গোসল না করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি ‘অগ্নি স্নান’ করেন। এ অগ্নিস্নান তার শরীরের সমস্ত রোগ-জীবাণু মেরে ফেলে বলে দাবি ‘কৈলাস সিংয়ের’।
কয়েক মাস আগে গ্রামবাসীরা তাকে প্রথমবারের মতো গোসল করিয়ে দেন। গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমু।
আমু হাজি বসবাস করতেন ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ফারস প্রদেশের দেজগা গ্রামে একটি গর্তে। রাতযাপন করেন ওই গর্তে, যা অনেকটা কবরের মতো।
২০১৪ সালে তেহরান টাইমস জানিয়েছিল আমু হাজি রাস্তায় পড়ে থাকা মরা প্রাণী এবং জীব-জন্তুর বিষ্ঠার তৈরি সিগারেট খেতেন।
একবার ওই এলাকার কিছু ‘দুষ্টু’ বালক তাকে জোর করে গোসল করিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু কৌশলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
পুরনো ছেঁড়া কাপড় পোশাক হিসেবে ব্যবহার করেন আমু। শীতের সময় আরামের জন্য বাড়তি হিসেবে একটি হেলমেট ব্যবহার করেন!
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে উদাসীন আমু হাজি গাড়ির আয়নায় তাকিয়ে নিজের চেহারা দেখার মনোবাসনা নিবৃত করেন। আর চুল কাটার ইচ্ছা হলে আগুনে পুড়িয়ে দেন!
এর আগে ৬৬ বছর বয়সী ভারতীয় নাগরিক কৈলাস সিংয়ের ৩৮ বছর ধরে গোসল না করার রেকর্ড ছিল। আর ৬০ বছর গোসল না করে পূর্বের রেকর্ডটি ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছেন বলে দাবি আমু হাজির।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৫
আপনার মতামত জানানঃ