জাল স্বাক্ষরে সরকারি দুই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণ প্রকল্পের ৪৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রথম মামলায় গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প থেকে ২১ কোটি ৮৩ লাখ ২৮ হাজার ৫১২ টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয় মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প থেকে ২১ কোটি ৮৪ লাখ ২৪ হাজার ৯০৩ টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুদকের উপ-পরিচারক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক (জনসংযোগ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন— তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী/ক্যাশ মো. আনিসুর রহমান, ঠিকাদার এম জাহান ট্রেডার্সের মালিক মো. মহসীন আলী, গ্রিন ট্রেডার্সের মালিক মো. মাহফুজ হুদা সৈকত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক ও আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে ভুয়া বিল প্রস্তুত করে সরকারি অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে।
প্রথম মামলায় গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প থেকে ২১ কোটি ৮৩ লাখ ২৮ হাজার ৫১২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প থেকে ২১ কোটি ৮৪ লাখ ২৪ হাজার ৯০৩ টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিদের দণ্ডবিধির ৪০৬/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দেশ জুড়ে ক্ষমতাবানদের দ্বারা অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে। গত আগস্ট মাসে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন রংকরণ প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলাম খান মামুনের বিরুদ্ধে। কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা নিজের পকেটে নেন তিনি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে নীরব ভূমিকা পালন করেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (টিআর) প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন রংকরণের জন্য ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাগজে-কলমে কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করেন প্রকল্প কমিটির সভাপতি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য সাহিদা বেগম।
গত জুলাই মাসে ফরিদপুরের নগরকান্দায় একটি ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির বরাদ্দের টাকার বেশির ভাগ আত্মসাৎ করা হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে কর্মপরিকল্পনায় কাজ না করে ভুয়া নামের তালিকার মাধ্যমে প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সভাপতির বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে কম শ্রমিক ও কাজে অনিয়ম দেখলেও মেয়াদ শেষে শতভাগ বিল প্রদান করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস।
অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ২য় পর্যায়ে ৪০ দিনের কর্মসূচিতে কাইচাইল ইউনিয়নে ১২০ জন শ্রমিকের কাজ করার জন্য ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২৭ এপ্রিল থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ৩০ জুন শেষ হয়। ১২০ জন শ্রমিকের ৪০ কর্মদিবস কাজ করার কথা থাকলেও চুক্তিভিত্তিক স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে নামমাত্র কাজ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা।
ইউনিয়নে একটি মাত্র প্রকল্পে ৪নং ওয়ার্ডের মধ্য কাইচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মধ্য কাইচাইল ঈদগাহ পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণে ১২০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও সেখানে মাত্র ১৫ জন চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছেন। অতিদরিদ্রদের তালিকায় ব্যবহার করা হয়েছে সচ্ছল ব্যক্তি ও চেয়ারম্যানের কাছের লোকজনের নাম। তালিকায় এমন ব্যক্তির নাম রয়েছে, যারা জানেন না তাদের নাম তালিকায় রয়েছে। অথচ তাদের নামের বিপরীতে টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এর আগে জুন মাসে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইজিপিপির অধীনে চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়নে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৪৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। গত ২২ জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ৩১ মার্চ শেষ হয়।
চারটি প্রকল্পে ৩০১ জন হতদরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, চারটি প্রকল্পের কোথাও মাটি কাটতে দেখা যায়নি শ্রমিকদের। ওই ৩০১ জনের তালিকার বিষয়েও কোনো কিছু জানা নেই তাদের।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৪০
আপনার মতামত জানানঃ