পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বেড়েছে। সংখ্যালঘু নারীরা ঘরে ঢুকে কিংবা ঘর থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডেইলি হান্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানে এক হিন্দু নারী খামার কর্মীকে সম্প্রতি পিটিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছে খামারের মালিক ও তার সহযোগীরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কুসুম বাই লাহিন্দে পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুর শহরের বাসিন্দা গঙ্গা রামের স্ত্রী। তিনি একজন খামার শ্রমিক। ৭ অক্টোবর খামারের মালিক মুহাম্মদ আকরামের কাছ থেকে তার মজুরি সংগ্রহ করতে গেলে তার নিয়োগকর্তারা তাকে নির্মমভাবে মারধর করে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, পরদিন সকালে আকরাম ও তার ছয় সহযোগী জোরপূর্বক কুসুমের বাড়িতে প্রবেশ করে। তার পরিবারের সদস্যদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। তার পরিবারের সামনে তাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে তারা।
কুসুমের পরিবার অভিযোগ করেছে, তারা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলে তাকে এবং পরিবারকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কুসুম ও তার পরিবার সোমবার (১০ অক্টোবর) বাহাওয়ালপুর সিটি থানায় যায়। কিন্তু আকরামের বেশ কয়েকটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংযোগ থাকায় থানার কর্মকর্তারা তার অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি বছর ১৫-র হিন্দু নাবালিকাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে দুই অভিযুক্ত। পরে তাকে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে যায় বলেও জানিয়েছে ওই সংবাদমাধ্যম।
ওই নাবালিকার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পাকিস্তান পুলিশ। পাশাপাশি, নির্যাতিতা হিন্দু নাবালিকার একটি ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিয়োতে নির্যাতিতাকে দুই অভিযুক্তের নাম বলতে শোনা গেছে। কীভাবে তাকে অপহরণ করা হয়েছে তাও ভিডিয়োতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে ওই নাবালিকা। ভিডিয়োটি কোথায় তোলা হয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট করেনি পাক সংবাদমাধ্যম। অন্যদিকে, পলাতক দুই অভিযুক্তের খোঁজ চালাচ্ছে পাক পুলিশ।
দেশটির সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই হিন্দু নাবালিকাকে তার বাড়ি থেকেই তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় দুই দুষ্কৃতী মুশতাক বাজীর এবং নবী বক্স। নির্যাতিতাকে একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরের দিন মুশতাক এবং নবী তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় বলে দাবি করেছে ওই নাবালিকা।
হিন্দুদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নারীদের অপহরণ এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর অত্যাচার নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও সিন্ধু প্রদেশে জোর করে ধর্মান্তকরণের অভিযোগের খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের অভিযোগ, প্রশাসনের মদতে তাদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালায় কট্টর ইসলামপন্থী এবং স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। হিন্দুদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে নারীদের অপহরণ এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে অভিযোগ তাদের।
নারী নিগ্রহের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের জুনে পাঞ্জাব প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। পাক সরকার সূত্রে খবর, দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচটি ধর্ষণের মামলা পাঞ্জাব প্রদেশের কোনও না কোনও থানায় দায়ের করা হচ্ছে। এই নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতি যে বদলাচ্ছে না।
দেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের বারবার দাবি করা সত্ত্বেও, সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর মুসলিম উগ্রবাদী এবং সামন্ত জমিদারদের নিরবচ্ছিন্ন নৃশংস আক্রমণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক গতিতে বাড়ছে।
পাকিস্তানের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পাকিস্তান এখন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ধীরে ধীরে নরক হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর চলে অকথ্য অত্যাচার। অধিকাংশ সময়ই তা প্রকাশ্যে না এলেও মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায় পাকিস্তানে উগ্র মৌলবাদীরা সংখ্যালঘুদের ওপর কী পরিমাণে অত্যাচার চালাচ্ছে। সংখ্যালঘুরা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। তাদের সেখানে কোনো নাগরিক অধিকার নেই। পাকিস্তানী হয়েও তাদের থাকতে হয় অনাগরিকের মতো।
তারা আরও বলে, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দেশ পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত অবরোধের মধ্যে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। তাত্ত্বিকভাবে, পাকিস্তানের সংবিধান সমস্ত নাগরিককে সমান অধিকার প্রদান করে, তবে এগুলো কেবল কাগজে কলমে রয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু যেমন, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, আহমদি এমনকি শিয়ারাও দেশটিতে অ-নাগরিক হিসাবে বিবেচিত হয়। তাদের কথা বলার অধিকার নেই। সংবিধানমূলক বা আইনের সুরক্ষার অধিকার থেকেও বঞ্চিত এখানকার লোকেরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫৭
আপনার মতামত জানানঃ