বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ যখন ঘরবন্ধী, তখন মৃত্যুকে উপেক্ষা করে সামনে থেকে চিকিৎসক নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা সমানে কাজ করে যাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং করোনা মহামারী মোকাবেলায় নিজেদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাটাও অনেক। তবুও সবসময়ই তারা সামনে থেকে সমানে কাজ করে যাচ্ছেন। এবার তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ ফ্রান্স সরকার তার দেশে অভিবাসী স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও দোকানকর্মীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
সাধারণত ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেতে হলে দেশটিতে ৫ বছর বসবাস করতে হয়। সেই সাথে ফরাসি মূল্যবোধের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। তবে করোনার যোদ্ধা অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য হবে না। ফ্রান্সে দুই বছর বসবার করলেই আবেদন করতে পারবেন তারা।
ফ্রান্স সরকার তাদের দেশে করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে কাজ করা সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পুরস্কারস্বরূপ নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্যোগটি প্রথম ঘোষণা করে গত সেপ্টেম্বরে। সে অনুযায়ী, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা অভিবাসীদের নাগরিকত্বের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে আবেদন জমা পড়ে প্রায় ৩ হাজার। যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে ৭৪ জন ফরাসি পাসপোর্ট পেয়ে গেছেন। আরো ৬৯৩ জনের নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে।
করোনায় গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়লেও মাঠে সমানে কাজ করে যাচ্ছেন এক শ্রেণির মানুষ। করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা দেওয়ার জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে নিবেদিত ছিলেন চিকিৎসক ও নার্স। তাদের এই দুঃসাহসিক নিবেদনের জন্য তাদের ফ্রন্টলাইন হিরো তকমা দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসক ও নার্সদের বাইরেও আরেক শ্রেণির মানুষ মাঠে সমানে কাজ করেছে গেছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও দোকানকর্মীরা। এক রকম বলা চলে, তাদের ঘাড়ে চড়েই এই স্থবির বিশ্ব গতি ধরে রেখেছে। তাদের এই দুঃসাহসিক অবদানের জন্য ফ্রান্স ঘোষিত পুরষ্কারকে অনেকে তাই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
ইতোমধ্য করোনা টিকা চলে এলে টিকা দেওয়ার তালিকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসক নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের শীর্ষে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, তার বেঁচে থাকলে অন্যরা বাঁচবে। যারা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের।
ফ্রান্সের সাথে অন্যান্য দেশ থেকেও যেন এমন ঘোষণা আসে, এমন দাবি তুলেছেন বিভিন্ন দেশের নেটিজেনরা। তারা মনে করেন, ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করা এই যোদ্ধাদের সাহসিকতার পুরষ্কার দেওয়া উচিত। নাগরিকত্ব প্রদানসহ অন্যান্য সুবিধার সুযোগ তৈরী করে দেওয়ার দাবিও জানানো হয়। এতে করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সম্মুখসারিতে থেকে লড়াইয়ে উৎসাহ পাবে অন্যরাও।
এসডাব্লিউ/ডিআর/এসকেএইচ/১৬৫০
আপনার মতামত জানানঃ