বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নিম্ন আদালতে এক বিচারকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আদালতপাড়া অচল হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রুবেল আহমেদ নামক এক আইনজীবীকে বেআইনিভাবে লক আপে ঢোকানোর মধ্য দিয়ে এই সঙ্কটের সূত্রপাত। ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, গতকাল বুধবার সকাল থেকে আদালত পাড়ায় বিক্ষোভ, উত্তেজনার পর বিচারক আসাদুজ্জামান নূরকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনা দেশের আইন অঙ্গনের জন্য লজ্জার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একজন বিচারক এভাবে বিচারিক ক্ষমতাকে পেশিশক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার বানাচ্ছেন, এটা মেনে নিতে পারছেন না আইনজীবীরা।
জানা যায়, আইনজীবীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও বেআইনিভাবে আসামির লক আপে দুই ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগে তার অপসারণের দাবিতে আইনজীবীরা গতকাল কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। সিএমএম আদালতের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় বিচার কাজ। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আইনজীবীরা এই বিক্ষোভ করেন। তবে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (সিএমএম) সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর বিক্ষোভ স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) বরাত দিয়ে জানিয়েছেন যে, আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে দুই দিনের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরকে। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনা ঘটেছে। একজন আইনজীবীকে ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর অসম্মান করেছেন। ওই আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন।”
আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে সিএমএম জুলফিকার হায়দারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তাকে (আসাদুজ্জামান নূর) আপাতত দু’দিনের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আরো জানা গেছে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তাকে প্রত্যাহার বা বদলি করা হবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।”
ভুক্তভোগী আইনজীবীর নাম রুবেল আহমেদ ভুঞা। লক আপে আটক রাখার অভিযোগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরাবর আবেদন দিয়েছেন ভুক্তভোগী আইনজীবী। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি। আবেদনে তিনি বলেন, মঙ্গলবার তিনি ওই আদালতে মামলা পরিচালনা করতে যান। এ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারক এজলাসে উঠবেন বলে জানান। কিন্তু ১১টার দিকেও বিচারক না উঠায় বিষয়টি পেশকারের কাছে জানতে চান।
আবেদনে আরও বলা হয়, পরে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে বিচারক ওই আইনজীবীর মামলা না শুনে পরে আসতে বলেন। ওই আইনজীবী বলেন, পরে গেলে আমাকে দুই ঘণ্টা লক আপে আটকে রাখেন এবং বলেন আমার সনদ বাতিল করে দেবেন এবং সব ম্যাজিস্ট্রেটকে বলে দেবেন আমার মামলা না শোনার জন্য। আমি বিষয়টিতে চরম অপমান বোধ করছি এবং উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
আন্দোলনকারী আইনজীবীরা বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রয়োগে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বিধায় বিচারকরা এমন আগ্রাসী চেহারা ধারণ করছেন। অথচ তারা আমাদের অভিভাবক। আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বিচারকরা কেউ কেউ ইদানীং সরকারের পক্ষে রায় দিয়ে নিজেদের বিশাল কেউকেটা ভাবছেন। তারা মনে করছেন, এখন যা খুশি করা যাবে। এ ধরনের কিছু বিচারকই আদালতপাড়ার পরিবেশ নষ্ট করছে। বিচারকদের অবশ্যই দলীয় রাজনীতির ছায়া থেকে মুক্ত থাকতে হবে। নইলে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেলে রাষ্ট্রই ভেঙে পড়ার উপক্রম হবে।”
এসডাব্লিউ/ডিআর/এসকেএইচ/আরা/১৩০০
আপনার মতামত জানানঃ