দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ছেই। বাড়ছে মৃত্যুও। সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৪৮২ জন। যা চলতি বছর একদিনে সর্বোচ্চ।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৮২ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩২৮ জন এবং ঢাকার বাইরের ১৫৪ জন। নতুন ৪৮২ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৯২ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৪ হাজার ৩৬২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১২ হাজার ৬১৭ জন।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ স্বাস্থ্য কিংবা অন্য কোনো বিভাগের নেই। এ নিয়ে অতীতে বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ করেছেন, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ এ সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২ ওয়ার্ডে বিভিন্ন মাত্রার ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু করেছে দুই সিটি করপোরেশন, তবু ঢাকায় নিয়ন্ত্রণহীন ডেঙ্গু।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ স্বাস্থ্য কিংবা অন্য কোনো বিভাগের নেই। এ নিয়ে অতীতে বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ করেছেন, এর কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। সিটি করপেরেশন বা স্থানীয় মন্ত্রণালয়সহ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগী হতে হবে।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, স্থানীয় সংক্রমণ যেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে, এসব এলাকায় দ্রুত শনাক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হয়। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জেলা-উপজেলাগুলোতে এখনও এডিস মশা নিধনে কার্যকার ব্যবস্থা নেই।
এসব এলাকায় মশা নিধনে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতি নেই। এ সমস্যা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞতা আছে। তবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাগুলোর দক্ষতা সীমিত। ফলে ডেঙ্গু জেলা থেকে উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ায় সামনে আরও জটিল পরিস্থিতির শঙ্কা রয়েছে। জেলা আক্রান্তত হলে উপজেলাগুলোতেও ডেঙ্গু ছড়াবে। কারণ নগরায়ণের প্রভাব উপজেলা পর্যন্ত চলে গেছে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যে কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগী। মশা নিয়ন্ত্রণে দেশের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। গঠন করতে হবে জাতীয় মশা নিধন সেল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২৪১
আপনার মতামত জানানঃ