বেলজিয়ামে অচেতন না করে পশু জবাই নিষিদ্ধের আইনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদলত। এতে বেলজিয়ামের আইনটি বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছেন তারা। আর এতে সংশয় দেখা দিয়েছে মুসলিম ও ইহুদী জনগোষ্ঠীর মাঝে।
২০১৭ সালে বেলজিয়াম অচেতন না করে পশু জবাই নিষিদ্ধ করে একটি আইন করে। এতে মুসলিম ও ইহুদি সমাজে প্রচলিত পশু জবাই আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। এ আইনের বিরুদ্ধে লুক্সেমবার্গের দি ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা করে উভয় সম্প্রদায়। তারা এটিকে ধর্মীয় স্বাধীয়নতায় বাধা প্রদান বলে উল্লেখ করে।
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শীর্ষ আদালত এই আইনকেই বহাল রাখার পক্ষে তারা রায় দেন৷ সংবাদসংস্থা রয়টার্স বলছে, এতে করে ইউরোপের অন্যান্য দেশে এমন আইন প্রণয়ন করার পথ খুলতে পারে৷
এই আইনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সাল থেকেই সরব ছিল বিভিন্ন ইহুদি ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন৷ তারা তখন বলেন যে, কোনো প্রাণীর মাংস হালাল বা কোশার হতে গেলে সেই প্রাণীকে আগে শক দেওয়া যাবে না৷ কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের শীর্ষ আদালতের মত, বেলজিয়ান আইনটি বহাল রাখাই সঠিক, কারণ, ধর্মে প্রচলিত আচারকে এই আইন সম্পূর্ণভাবে খারিজ করছে না৷
একই সাথে, এই শক দেওয়াতে আংশিকভাবে ধর্মচর্চায় বিঘ্ন ঘটবে, তা স্বীকার করে আদালত৷ কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সার্বিক প্রাণিকল্যাণ নীতির কথা মাথায় রেখেই আদালত এমন রায় দিয়েছে৷
বেলজিয়ামের পশু অধিকার কর্মীরা বহু বছর ধরে আন্দোলন করছিলেন এ ধরণের একটি আইনের জন্য। কিন্তু ইহুদী এবং মুসলিম নেতারা এই আইনকে ‘এন্টি সেমেটিক’ (ইহুদী বিদ্বেষী) এবং ইসলাম বিদ্বেষী বলে বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন, উদারনৈতিক রাজনীতির ছদ্মাবরণে এই কাজটি করা হচ্ছে।
এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বেলজিয়ানের প্রাণী অধিকার সংস্থা ‘গ্লোবাল অ্যাকশন ইন দ্য ইন্টারেস্ট অফ অ্যানিমেলস’ বা জিএআইএ৷ তারাও একমত যে, এই রায় ইউরোপের অন্যান্য দেশে সমধর্মী আইন প্রণয়নের পথ খুলবে৷ কিন্তু বেলজিয়ামের ইহুদি সংগঠন সিসিওজেবি জানিয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনও চলবে৷
পশু অধিকার কর্মীদের যুক্তি হচ্ছে, এভাবে জবাই করা পশুকে তীব্র মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। কিন্তু ধর্মীয় নেতারা পাল্টা যুক্তি দেন যে, এই প্রক্রিয়ায় আসলে কোন যন্ত্রণা হয় না। কারণ পশুটি সাথে সাথে মারা যায়।
দুই পক্ষের এই যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মাঝখানে পড়ে কিছু ইউরোপীয় দেশ দুয়ের মধ্যে কিছুটা ভারসাম্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।
ইউরোপীয় আইনে মাংস খাওয়ার জন্য কোন পশুকে হত্যার আগের মূহুর্তে সেটিকে ‘অচেতন’ করার বিধান আছে। যাতে করে পশুটি কোন যন্ত্রণা ভোগ না করে। তবে ধর্মীয় কারণে কোন কোন দেশে এর ব্যতিক্রম করার পথও রাখা হয়েছে। কোন কোন দেশে এই বিধান কিছুটা শিথিল করে বলা হয়েছে, কোন পশুকে যদি গলা কেটে এক আঘাতেই হত্যা করা যায়, তখন সেটিকে অচেতন করতে হবে না।
ইতিপূর্বে সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও স্লোভেনিয়ার অচেতনবিহীন পশু জবাই নিষদ্ধ করা হয়েছে। এরপর বেলজিয়ামেও আনুষ্ঠানিকভাবে পশু জবাই নিষেধ করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১০২০
আপনার মতামত জানানঃ