পৃথিবীতে একধরনের জেলিফিশ আছে, যারা জৈবিকভাবে প্রায় অমর। টারিটোপসিস ডোরনি নামের এই জেলিফিশ পাওয়া যায় ভূমধ্যসাগর এবং জাপানের আশেপাশের সাগরে। ১৮৮০ এর দশকে প্রথম আবিষ্কার হলেও এরা যে অমর এটা প্রমাণিত হয় প্রায় একশ’ বছর পর ১৯৯০ এর দশকে। এরা এদের জীবনচক্রের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বা যৌন দশায় পৌঁছানোর পর বিশেষ কিছু উদ্দীপনায় প্রভাবিত হয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা অযৌন দশায় ফিরে যেতে পারে। অন্যান্য প্রজাতির জেলিফিশের জীবনকাল যেখানে নির্দিষ্ট, সেখানে এরা প্রায় অনন্ত জীবনের অধিকারী।
সর্বোচ্চ কত বছর বাঁচতে পারে মানুষ? গত বছর ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে গাণিতিক মডেলিং পদ্ধতির সাহায্যে মানুষের সর্বোচ্চ আয়ু কত হতে পারে তা নির্ণয় করেছিলেন গবেষকরা। আর সেই হিসেব বলছে, ১২০ থেকে ১৫০ বছরের বেশি আয়ু পাওয়া সম্ভব নয় মানুষের। কেননা ওই বয়সের পর অসুস্থতা ও ক্ষত সারিয়ে ওঠার মতো ক্ষমতা আর থাকে না মানব শরীরের। ফলে মৃত্যুকে এড়ানো অসম্ভব হয়ে যায়। ওই গবেষণাপত্রটির অন্যতম লেখক অধ্যাপক জুডিথ ক্যামপিসি সেই সময় জানিয়ে দিয়েছিলেন, অমরত্ব একটা অসম্ভব আইডিয়া। একটা বিষয় নিশ্চিত। সকলকেই একদিন না একদিন মরতে হবে।
কিন্তু মানুষ কিংবা জীবজগতের সকলের ক্ষেত্রে যে নিয়ম খাটে তা টারিটোপসিস ডোরনিদের ক্ষেত্রে খাটে না কেন? হ্যাঁ, এবার সেই রহস্যেরই অনুসন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাল, ইচ্ছে মতো বয়স কমিয়ে ফেলতে পারে এই অমেরুদণ্ডী জলজ প্রাণীটি। কিন্তু কীভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে, বুঝতে হবে বয়স বৃদ্ধির কারণ। জন্মের পর থেকে যেকোনো প্রাণীর দেহেই ক্রমশ গড়ে ওঠে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সেইসঙ্গে বিভাজিত হয় দেহ কোষও। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে, বন্ধ হয়ে যায় কোষ বিভাজন। যেমন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে স্নায়ুকোষের বিভাজন হয় না। অন্যান্য কোষের বিভাজন হলেও, তার হার কমতে থাকে ক্রমশ। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময় পরে কমতে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। যার ফলস্বরূপ আমরা এগিয়ে যাই বার্ধক্যের দিকে। আর এর জন্য দায়ী মানুষের জিনোমে থাকা একটি বিশেষ উপাদান—টেলোম। যা ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।
তবে ‘টারিটোপসিস ডরনি’ প্রজাতির জেলিফিশের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্যরকম। এই প্রজাতির জেলিফিশের জিনোমে অবস্থি টেলোমের ক্ষয় হয় না। ফলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিংবা কোষ-বিভাজনেও প্রভাব পড়ে না কোনো। বার্ধক্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, রোগভোগকে উপেক্ষা করে দিব্যি বছরের পর বছর তারুণ্য উপভোগ করতে পারে এই জেলিফিশ। একমাত্র অন্য প্রাণীর আক্রমণ বা দুর্ঘটনার শিকার হলে তবেই মৃত্যু হয় তাদের। টারিটোপসিস গোত্রের আরও একটি জেলিফিস ‘টারিটোপসিস রুব্রা’-র ক্ষেত্রে আবার প্রথম যৌনমিলনের পর থেকেই ক্ষয় শুরু হয় টেলোমের।
সম্প্রতি এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ বিজ্ঞান পত্রিকায়। সংশ্লিষ্ট গবেষণার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন স্পেনের ওভিয়েডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ