নেপালের সরকার ভেঙে দিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। কাতারভিত্তিক আলজাজিরা জানায়, পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ও ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভাণ্ডারি। ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল এবং ১০ মে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে জানানো হয়।
করোনাভাইরাস ও দেশের অর্থনীতি সংক্রান্ত বেশ কিছু ইস্যুতে নেপালের রাজনীতিতে একটা ডামাডোল চলছে। সরকার ব্যর্থ হয়েছে এই বিষয়গুলো সামাল দিতে, এই অভিযোগ তুলে ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছিল বিরোধীরা। শেষমেশ সরকার ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করলেন ওলি। রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকালে মন্ত্রী পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে নির্বাচিত সরকার ভেঙে দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন তিনি। বৈঠকে তিনি জানান, ‘তার সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। অতএব সরকার ভেঙে দেওয়া হোক।’
কেপি শর্মা অলি কমিউনিস্ট পার্টি নেপাল-এর চেয়ারম্যানদ্বয়ের অন্যতম। কমিউনিস্ট পার্টি নেপাল, দুইটি রাজনৈতিক দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (একীকৃত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) ও নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী কেন্দ্র)-এর সমন্বয়ে গঠিত। কেপি শর্মা অলি প্রথম দফায় ২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে নেপালের ক্ষমতায় আসেন। নেপালের একীভূত কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী), রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি, মধেশী অধিকার ফোরাম এবং অন্যান্য ১৩টি ছোট দল ওলীকে সমর্থন দেয়। ১২ অক্টোবর তাকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
২০১৬ সালের ১৩ জুলাই নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী-কেন্দ্র) জোট সরকার থেকে সমর্থন তুলে দেয় এবং ১৪ জুলাই অনাস্থা প্রস্তাব আনে। এতে সিপিএন-ইউএমএল ও ওলী সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন হারান। কিন্তু সিপিএন-ইউএমএল সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনায় বসে। এর মধ্যে অন্য দুই বৃহৎ দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি ও মধেশী অধিকার ফোরাম-গণতান্ত্রিক জোট সরকারের উপর তাদের সমর্থন তুলে দেয়। আলোচনার তৃতীয় দিন, ২৪ জুলাই বিরোধী দলগুলোর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে ওলী পদত্যাগ করেন।
২০১৭ সালের নির্বাচনে ইউসিপিএন (মাওবাদী)-এর সমর্থন নিয়ে সিপিএন-ইউএমএল প্রতিনিধি সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ওলী ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। অবশেষে এবারো তাকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে সিংহাসন ছেড়ে। সাথে ভেঙে যাচ্ছে তার সরকার।
এর কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করছে, সরকারের ভেতরকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই সরকার ভেঙে দেওয়ার কারণ। অনেকে আবার সরকার ভেঙে দেওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের চেয়ে এগিয়ে রেখেছেন সরকারের ব্যর্থতাকে। এসপক্ষে প্রমাণ হিসেবে সামনে তুলে এনেছেন করোনা আক্রান্ত নেপালের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি।
নেপালের প্রভাবশালী দৈনিক কাঠমাণ্ডু পোস্ট বলছে, ‘বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল। ব্যাপক চাপে থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।’
রিপোর্ট আরো বলছে, সংবিধান পরিষদীয় আইন-এর অধ্যাদেশের বিষয়টি নিয়ে ক্রমাগত চাপ বাড়ছিল ওলির উপর। গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারীকে দিয়ে তা সই করিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তা ছাড়া বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একটা অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল।
আপনার মতামত জানানঃ