পর্তুগালে একটি বাড়ির পেছনের বাগান থেকে দৈত্যাকার এক ডাইনোসরের কঙ্কালের খোঁজ মিলেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এটিই এ যাবতকালে আবিষ্কৃত ডাইনোসরের কঙ্কালের মধ্যে সর্ববৃহৎ।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, বাড়ির বাগানে মাটি খুঁড়ছিলেন এক ব্যক্তি। একটি বিশেষ গন্ধ নাকে আসতেই মনের কোণে সন্দেহ দানা বাঁধল। খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে তড়িঘড়ি জীবাশ্মবিদদের খবর দিলেন তিনি। তার পর সেই বাগানের মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল ডাইনোসরের কঙ্কাল। দাবি করা হয়েছে, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডাইনোসরের কঙ্কাল। এর পর, ওই এলাকায় আগামী দিনে আরও খননকাজ চালানো হবে।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে পর্তুগালে এক ব্যক্তির বাগানে ওই জীবাশ্মের হদিস পাওয়া যায়। এর পর খননকাজ শুরু হয়। আগস্ট মাসের শুরুতে মধ্য পর্তুগালের পোম্বলের কাছে ওই ব্যক্তির বাড়ির বাগানে খোঁড়াখুঁড়ির পর দৈত্যাকার ডাইনোসরের কঙ্কাল উদ্ধার করেন পর্তুগাল ও স্পেনের বিজ্ঞানীরা।
ধারণা করা হচ্ছে, এটিই এ যাবতকালে আবিষ্কৃত ডাইনোসরের কঙ্কালের মধ্যে সর্ববৃহৎ।
জীবাশ্মবিদদের মতে, ইউরোপে এর আগে এত বড় ডাইনোসরের কঙ্কাল উদ্ধার হয়নি।
জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ডাইনোসরের কঙ্কালটি সরোপড প্রজাতির।
ডায়নোসরের যত প্রজাতি রয়েছে, তার মধ্যে সরোপড বৃহত্তম।উদ্ধার হওয়া ডাইনোসরের কঙ্কালটির দৈর্ঘ্য ১২ মিটার। উচ্চতা ২৫ মিটার। প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়াত ওই ডাইনোসর।
সংবাদ সংস্থাকে লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এলিজাবেথ ম্যালাফাইয়া বলেছেন, ‘‘ইউরোপে এই প্রথম সবচেয়ে বড় ডাইনোসরের কঙ্কাল উদ্ধার করা হল। বিশ্বেও সম্ভবত প্রথম।’’
সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে বিশাল দেহের বিভিন্ন প্রজাতির এক একটি ডাইনোসর। ডাইনোসর নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই জনমনে। বিজ্ঞানীরাও এ নিয়ে দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য। তবে মানুষ যে তাদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জেনে উঠতে পারেনি, তা প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ডাইনোসর নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আগ্রহের শেষ নেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদেরও।
বিশাল শরীর আর দাপুটে মেজাজ নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে ডাইনোসর। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান প্রভাবশালী প্রাণী এরা। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। কোটি কোটি বছর আগে তা বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে।
ধারণা করা হয়, ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর আঘাতের পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং ও ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ওই উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতের অন্তত ৫ কোটি বছর আগেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের জন্মের সময় পৃথিবী ছিল উষ্ণ। কিন্তু দিনে দিনে পৃথিবী শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতাও নেমে যেতে শুরু করে। এর ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ডাইনোসরের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম অনেকটা একই সময়ে হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা শীতল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০২
আপনার মতামত জানানঃ