প্রত্যেক মানুষেরই খাবারে বাছ বিচার আছে। নিজের পছন্দ এবং রুচি অনুযায়ীই মানুষ খাবার গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু এই বাছ বিচার করে খাওয়া খাবারের সাথে আরো এমন কিছু খাবার চলে যায় যা কেউই খেতে চাইবে না। কেউ তো কখনো শুনেনি অমুক পাইপ খেতে পছন্দ করে, তমুক পছন্দ করে প্লাস্টিকের চেয়ার। মানুষের খাবারে বাছ বিচার পছন্দ অপছন্দ থাকলেও, একজন মানুষ প্রতি সপ্তাহে নিজের অজান্তেই পাঁচ গ্রাম প্লাস্টিক খেয়ে থাকেন। কোনো আদিবাসী কিংবা দরিদ্র জনগোষ্ঠী নয়, বিশ্বের সকল মানুষই গড়ে এই প্লাস্টিক পদার্থ ভোগ করেন। অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে আসে।
গবেষণা মতে, এই প্লাস্টিকের বেশিরভাগই অদৃশ্য পলিমার। ট্যাপের পানি, প্লাস্টিক বোতলের পানি পানের মাধ্যমে এই প্লাস্টিক কণা ভক্ষণ করে মানুষ।
গবেষণা বলে, শুধু পানি থেকেই মানুষ গড়ে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ৭৬৯ পার্টিকেল প্লাস্টিক খায়। স্থান ভেদে এর মাত্রা কমবেশি হতে পারে, কিন্তু কেউ এর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। এর ওপর ভিন্ন ভিন্ন আরো ৫২টি গবেষণাও সমাপ্ত করা হয়েছে।
আরেকটি গবেষণায় উঠে আসে, প্রতিটি মার্কিন নাগরিক বছরে ৪৫ হাজারের বেশি প্লাস্টিক কণা ভক্ষণ করে। এই কণাগুলো ১৩০ মাইক্রনের চেয়েও ছোট।
ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ম্যালকম হাডসন বলেন, “এ কণাগুলো আমাদের রক্ত ও লসিকাতন্ত্রে প্রবেশ করে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গে থেকে যেতে পারে। এই প্লাস্টিক কণাগুলো টাইম বোমার মতো, যে কোনো মুহূর্তেই তা ভেঙ্গে মানুষ ও প্রাণীদেহে প্রবেশ করতে পারে।”
মানবদেহে এই প্লাস্টিক কণার প্রভাব সম্পর্কে নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো-প্লাস্টিক এক্সপার্ট থাবা পালানিসামি বলেন, ‘মানবদেহে জমাট বাধা এই প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ বিষে রূপান্তরিত হয়। যা মানবদেহে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষতিসাধন করতে পারে।’
বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৩৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে। প্লাস্টিকের বৈশ্বিক উৎপাদন ২০৫০ সালের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সাল থেকে পুরো বিশ্বে যে পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে, তা বিগত বছরগুলোর মোট পরিমাণের সমান। এর এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ সরাসরি প্রকৃতির সংস্পর্শে আসছে। প্লাস্টিক দূষণের তীব্রতা অঞ্চলভেদে কম-বেশি হয়। তবে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো স্থান এই পৃথিবীতে নেই, যেখানে প্লাস্টিক দূষণ দেখা যায়নি।
গবেষকরা বলছেন, ‘প্লাস্টিক শুধু আমাদের সমুদ্র ধ্বংস করছে না, আমাদেরকেও ধ্বংস করছে। এর থেকে নিস্তার পেতে আমাদেরকে প্লাস্টিক জাতীয় বস্তু পরিহার করতে হবে।’
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৭১০
আপনার মতামত জানানঃ