চট্টগ্রামে চুরির অভিযোগে ১৩ বছর বয়সী দুই শিশুকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের একজনের মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে নগরের খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
গতকাল রোববার দুপুরে ওই ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর ঘটনায় জড়িত পুলিশের তিন সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত তিন পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. মেহেদী, মো. মাজহার ও মো. এহসান। তাঁরা নগর পুলিশের মনসুরাবাদ লাইনে থাকেন। সেখানে থেকে নগরের বাটালি হিল, লালখান ম্যাজিস্ট্রেট কলোনিসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তার জন্য টহল পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন তাঁরা।
ঘটনার শিকার দুই শিশু লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকে। তাদের একজন স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা একটি কারখানায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। আরেক শিশু কিছু করে না।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার তাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে কে বা কারা পাথর ছুড়ে মারে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট কলোনি, মতিঝর্ণাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায়ই ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন তিন শিশু লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ব্রিজের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিল।
তখন টহল পুলিশ সদস্যদের কাছে খবর যায়, এই শিশুরা সেখানে প্রায়ই চুরি করে থাকে। পরে পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে একজন পালিয়ে যায়। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যরা দুজনকে ধরে পাশের জিলাপির পাহাড়ে নিয়ে যান। পরে একটি লোহার খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সেখানে একজনের মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।
ঘটনার শিকার এক শিশুর মা বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো দিন চুরি করেনি। চুরি করেছে বলে পুলিশ আমার ছেলেকে নির্যাতন করেছে। মাথার চুলও কেটে দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে ছেলে ভয়ে বাসায় থাকছে না।’
পুলিশ লাইন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনিতে টহল দিতে আসা পুলিশ সদস্যরা স্থানীয় খুলশী থানার অধীনে কাজ করেন। কোনো ঘটনা কিংবা সংবাদ পেলে স্থানীয় থানাকে জানিয়ে থাকেন তাঁরা। জানতে চাইলে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। পরে এসে জানতে পারি। দুই কিশোরকে টহল পুলিশের সদস্যরা ধরলেও স্থানীয় থানা–পুলিশকে কিছুই জানাননি। তাঁদের উচিত ছিল থানা–পুলিশকে জানানো।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল মো. মেহেদী বলেন, তিনটা ছেলে ড্রেনের ভেতর বসে আছে বলে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। পরে সেখান থেকে তাদের আনা হয়। ওই সময় স্থানীয় লোকজন তাদের মারধর করতে থাকে। পুলিশ তাদের রক্ষা করে। তাদের কাছে কোনো মাদক কিংবা চুরির মালামাল পাওয়া যায়নি। তাদের ওপর কোনো নির্যাতন চালানো হয়নি। বয়স কম হওয়ায় তাদের অভিভাবকদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি স্থানীয় থানা কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কেন জানানো হয়নি প্রশ্নের জবাবে মেহেদী বলেন, চার্জ না থাকায় সেদিন মুঠোফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে থানা–পুলিশকে জানাতে পারেননি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আজ তাঁদের তিনজনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জানান মেহেদী।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) শাহাদাত হুসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে তিন পুলিশ কনস্টেবলকে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে আজ দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে
এসডব্লিউ/এসএস/০৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ