যে স্বপ্ন আর লক্ষ্য নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষেরা ‘আরব বসন্ত’ বিপ্লব শুরু করেছিল, আরব বসন্ত তার অধিকাংশই পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। পরিপূর্ন গণতন্ত্রের যাত্রা এখনো কোনো দেশেই শুরু হয়নি, অর্থনৈতিক অবস্থা আরো নাজুক হয়েছে, আর কয়েকটি দেশ প্রবেশ করেছে অন্তহীন গৃহযুদ্ধ। নতুন করে উত্থান ঘটেছে উগ্রপন্থার, মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে সুসংগঠিত হয়েছে আইএসের মতো সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর। প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বৈশ্বিক নিরাপত্তাকেই।
আরব বসন্তের অভূতপূর্ব সেই গণজাগরণের ১০ বছর পর গার্ডিয়ান-ইউগভ এক জরিপ প্রকাশ করেছে।
জরিপে এসেছে, আরব বিশ্বের নয়টি দেশের সিংহভাগ মানুষই এখন মনে করেন আরব বসন্তের পরে তাদের সমাজে অসাম্য বেড়েছে। তাদের জীবনমান নিচে নেমে গেছে। হতাশা বেড়েছে তাদের। আগের চেয়ে অধিকারহীন মনে করেন তারা নিজেদের।
তবে ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় যেসব দেশে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়েছিল সেগুলো বাদে বাকিগুলোর অধিবাসীদের মধ্যে সেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিয়ে গ্লানি বা অনুতাপ কম। জরিপে ৫,২৭৫ জনের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
আরব বসন্তের ফল নিয়ে প্রত্যাশিতভাবেই সবচেয়ে বেশি হতাশা সিরিয়ায়। সেখানকার ৭৫ শতাংশ মনে করেন, পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। ইয়েমেনের ৭৩ শতাংশ ও লিবিয়ার ৬০ শতাংশ উত্তরদাতারও একই মত। এই দেশগুলোতে রাজপথের বিক্ষোভ গৃহযুদ্ধে পর্যবসিত হয় ও বিদেশী হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
মিসর, ইরাক ও আলজেরিয়ার প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা বলেছেন ২০১০ এর আগের চেয়ে এখনকার অবস্থা খারাপ। পরিস্থিতি ভালো হয়েছে মনে করেন এমন সংখ্যা চারভাগের এক ভাগও না। তবে এসব দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যাদের বয়স কম, আরব বসন্ত প্রসঙ্গে তারা কম নেতিবাচক। আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, মিসর ও ইরাকের ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী অধিকাংশ তরুণই আরব বসন্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে।
তাদের বাবামায়েরা বরং বেশি হতাশা পোষণ করেন ওই ঘটনার প্রভাব নিয়ে।তারা বলেন আরব বসন্তের আগের তুলনায় বেশি খারাপ শিশুদের ভবিষ্যত।
এমনকি তিউনিশিয়াতেও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠিানগুলো হত্যা-সংঘাতের মধ্যে দিয়ে টিকে গেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম, মাত্র ১৭ শতাংশ। তবে আরব দেশগুলোর মধ্যে আরব বসন্ত নিয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে এমন মানুষের অনুপাত সেখানেই সর্বোচ্চ।
এখন সেখানে অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্বের উচ্চহার, যা আরো শোচনীয় হয়েছে কোভিড-১৯ এর কারণে। ফলে সেখানেও অধিকাংশই বলছে, অবস্থা আরব বসন্তের আগের তুলনায় খারাপ।
আরব বসন্তের পরে সমাজের অসমতা বেড়েছে এমন মত দিয়েছে ৯২ শতাংশ সিরীয়, ৮৭ শতাংশ ইয়েমেনি, এবং ৮৪ শতাংশ তিউনিশিয়ান। ইরাক ও আলজেরিয়ার প্রতি ১০ জনে সাতজন বলেছেন একই কথা। মিসরের ৬৮ শতাংশের কণ্ঠেও একই প্রতিধ্বনি।
মিসরের প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা জানান হোসনি মোবারকের আমলে যতটুকু বাকস্বাধীনতা ছিল এখন তার ক্ষেত্র আরো সংকুচিত হয়েছে। উত্তরদাতাদের পাঁচভাগের একভাগ মনে করেন তারা আগের চেয়ে মুক্ত। প্রতি তিনজনে একজন এ বিষয়ে কী বলবেন বুঝে উঠতে পারেননি।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে তিউনিসিয়ায় মোহাম্মদ বুয়াজিজি নামের রাস্তার এক দোকানি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়েছিলেন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ওই ব্যক্তির গায়ের আগুন থেকে জন্ম নিয়েছিল আরব বসন্ত। সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ থেকে বিক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর আফ্রিকা ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। পতন ঘটেছিল বহু স্বৈরশাসকের। মানুষ পরিবর্তনের দাবিতে নেমে এসেছিল রাস্তায়।
আপনার মতামত জানানঃ