দেশে নারীর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের চেয়ে বেশি পরিমাণে ঘটছে মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা। প্রায় প্রতিদিনই মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক শিশু ধর্ষণের খবর আসে।
ফেনীর সোনাগাজীতে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রকে (১২) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিশুর মা বাদী হয়ে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক নুর নবী ও মাদ্রাসার মুহতামিম গোলাম রহমানকে (৪৪) আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় গতকাল রাতেই গোলাম রহমানকে করেছে পুলিশ।
এর আগে গতকাল ভোররাতে মাদ্রাসার আবাসিক কক্ষে নুর নবী ওই ছাত্রকে ধর্ষণ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত নুর নবী খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর ধরে ছাত্রটি ওই মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করে আসছে। বাড়ি থেকে মাদ্রাসার দূরত্ব বেশি হওয়ায় সে মাদ্রাসার আবাসিক কক্ষে থাকত। গতকাল সকালে ওই ছাত্র হঠাৎ পালিয়ে বাড়িতে চলে আসে।
পরে ওই ছাত্রের পরিবারের লোকজন তাকে মাদ্রাসায় রেখে আসার কথা বললে সে কাঁদতে শুরু করে। এ সময় পরিবারের লোকজন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার মাকে জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষক নুর নবী তাকে ধর্ষণ করে আসছে। বিষয়টি কাউকে জানালে নুর নবী তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে ওই ছাত্র জানায়।
ওই ছাত্রের বাবা বলেন, ছেলের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনে তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে মুহতামিম গোলাম রহমানের কাছে নালিশ করেন। কিন্তু গোলাম রহমান তাদের কথা না শুনে উল্টো অভিযুক্ত শিক্ষক নুর নবীকে পালাতে সহায়তা করেন। এ জন্য তারা দুজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।
বেশ কিছুদিন ধরে শিক্ষক নুর নবী তাকে ধর্ষণ করে আসছে। বিষয়টি কাউকে জানালে নুর নবী তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে ওই ছাত্র জানায়।
সোনাগাজী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইয়াকুবুল ইসলাম ভূঁইয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আজ বুধবার ফেনীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ওই ছাত্রের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে।
পরে দুপুরে শিশুর জবানবন্দি নেওয়ার জন্য ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হবে।ঘটনার পর থেকে নুর নবী পলাতক। তাই এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালেদ হোসেন বলেন, মাদ্রাসাছাত্রকে ধর্ষণের মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোলাম রহমানের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আজ দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে ফেনীর কারাগারে পাঠানো হবে। মামলার মূল অভিযুক্ত নুর নবীকে ধরতে অভিযান চলছে।
মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ চলে আসছে বহুদিন ধরেই। পত্র পত্রিকার খবরে এ সমস্ত অভিযোগ উঠে আসছে অহরহ। প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা নিঃসন্দেহে আরও বহুগুণ বেশি।
মাদ্রাসার ছেলে শিশুরা তাদের ধর্ম শিক্ষকদের পাশবিক নির্যাতনে গুমড়ে কেঁদে মরছে। কেউ কেউ নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করছে। আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। তাদের অবিভাবকেরাও ধর্মগুরুর ফতোয়া থেকে বাঁচতে বা একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছে না। এই যে প্রদীপের নিচে অন্ধকার তা নিয়ে আমাদের সমাজে তেমন প্রতিবাদ হয়েছে কি?
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে সামাজিক নিরবতা রয়েছে। এর অন্যতম কারণ ধর্মীয় শিক্ষাস্থান নিয়ে আমাদের মাঝে একটা শ্রদ্ধা এবং ভয় কাজ করে। তাই এসব জায়গাতে এত অপরাধ হওয়ার পরেও আমরা চুপ থাকি। সরকার উদাসীন থাকে। গণমাধ্যম উদাসীন থাকে। আলেম ওলেমারা ফতোয়া দেয় না। ওয়াজকারীদের গলা ফাটানো চিৎকারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয় না। আমাদের সুশীলরা চুপ থাকে; সরকারবিরোধী আন্দোলনেও কেউ নামে না। মাদ্রাসার ছেলে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে কেউ অনশন করে না।
তারা বলেন, নির্যাতিত মাদ্রাসা শিশুদের নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই। তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও ভাল বোঝার জন্য এবং বিষয়টি রোধ করার জন্য এ ধরণের যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশলগুলোর বিকাশ করা উচিত।
আরও বলেন, “এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আমরা এখনও কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। মাদ্রাসাগুলোতে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে নীরবতা ভাঙাই সর্বপ্রথম দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৮
আপনার মতামত জানানঃ