সংঘাতকবলিত মিয়ানমার থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ঢুকছে হাজারো শরণার্থী। মিজোরামের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত জেলাগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে তারা।
মিয়ানমারে সামরিক শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই গত ১ বছর ধরে দলে দলে সে দেশের মিজো জনজাতির লোকজন পার্শ্ববর্তী মিজোরামে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। সরকারি হিসেব বলছে, মিয়ানমারের চিন প্রদেশ থেকে এখনও পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি মিজো জনজাতির লোকজনকে আশ্রয় দিয়েছে মিজোরাম। এদের মধ্যে চারজন সাবেক জনপ্রতিনিধিও রয়েছে।
মিজোরামের এক সরকারি কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ৯ জুলাই পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৩০,৩১৬ জন শরণার্থী মিজোরামে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৩০,২৯৯ জনের প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে।
৩০,০৮৪ জনকে মিজোরাম সরকার থেকে শরণার্থী কাড দেওয়া হয়েছে। এই শরণার্থীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১১,৭৯৮, আর নারীর সংখ্যা ১০,০৪৭।
ওই সরকারি কর্মকর্তা জানান, শরণার্থীদের যে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে তা শুধু তাদের চিহ্নিত করার জন্য। কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা তারা পাবেন না।
এদিকে, মাত্র ১২ লাখ মানুষ বসবাসকারী ভারতের এই ছোট্ট রাজ্যটিতে ১৫৬টি শরণার্থীশিবির খোলা হয়েছে শরণার্থীদের জন্য। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব শরণার্থীশিবির খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি শিবির খোলা হয়েছে। এ ছাড়া, লংটলাইতে ৩৬টি এবং চাম্ফাই নামক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ৩৩টি শিবির।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটি থেকে প্রতিবেশী ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মিজোরামে প্রতিদিন কমবেশি শরণার্থীর প্রবেশ অব্যাহত আছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত ও ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা জারি রয়েছে।এই ঘটনার পর দেশটিতে তীব্র গণ-আন্দোলন শুরু হয় এবং সামরিক ক্ষমতার জোরেই বার্মিজ সেনাবাহিনী তা দমনের চেষ্টা করে। এতে নিহত হচ্ছে শিশু নারীসহ অনেক বেসামরিক মানুষ।
বিক্ষোভ দমনে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথম দিকে লাঠিচার্য, রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, জল কামান ব্যবহার করলেও পরে জান্তার নির্দেশে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করে বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে ইতোমধ্যে দেশটিতে প্রায় ১৫ শ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
দেশটির একটি মানবাধিকার সংগঠনের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারে গত এক বছরের সংঘাতে ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই জান্তাবিরোধী। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি–হামলায় তারা প্রাণ হারান। এক বছরে দেশটিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ। আর জান্তার হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মিয়ানমারে ১৬৮ সেনা ও পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ