সৌদি আরবে বসবাসরত কারো যদি অন্য ধর্মের এবং বিদেশি স্ত্রী থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই একটি স্বাধীন ইকামা বা সৌদিতে বসবাসের জন্য আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হবে। সৌদি আরবের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের বরাত দিয়ে গালফ নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সৌদি জেনারেল ডিরেক্টরেট অব পাসপোর্ট জানিয়েছে, যদি একজন প্রবাসী পরিবারের প্রধান তার স্ত্রী এবং নাবালক সন্তানকে তার ইকামাতে যুক্ত করতে চান, তাহলে স্ত্রী ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলে তার জন্য স্বাধীন ইকামা বাধ্যতামূলক।
এছাড়া, কোনো বিদেশি দম্পতি যদি সৌদি আরবে বিয়ে করেন এবং স্বামী তাকে তার ইকামাতে যোগ করতে চান, তাহলে তাদের বিবাহ চুক্তির একটি অনুলিপি পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট ফি প্রদান করার পরে তার স্পনসরশিপ প্রথমে তাকে স্থানান্তর করতে হবে বলে জেনারেল ডিরেক্টরেট অব পাসপোর্ট জানিয়েছেন।
যদি নাবালক শিশুরা রাজ্যে জন্মগ্রহণ করে, তাদের জন্মের শংসাপত্রের উত্স এবং অনুলিপি সহ একটি স্বীকৃত হাসপাতাল দ্বারা জারি করা একটি মেডিকেল রিপোর্ট তাদের পিতার ইকামাতে যুক্ত করার জন্য আবেদনের সাথে সংযুক্ত।
আর সৌদি আরবে কোনো বিদেশি শিশুর জন্ম হলে জন্মের প্রশংসাপত্রের উৎস এবং অনুলিপিসহ একটি স্বীকৃত হাসপাতালের দেওয়া মেডিকেল রিপোর্ট শিশুটির বাবার ইকামাতে যোগ করার জন্য আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক পরিবার নিয়ে থাকেন। এর আগে বেশ কিছুদিন যাবৎ সৌদি সমাজে শর্তহীন বা নামমাত্র বিয়ে ‘মিসইয়ার’-এর ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। প্রচলিত বিয়ের খরচ মেটানোর সামর্থ্য না থাকা ব্যক্তিদের জন্য গোপনে এ ধরনের বিয়ে যেন ‘আশীর্বাদ’ হয়ে উঠছে। তবে ইসলামি চিন্তাবিদেরা এ বিয়েকে ‘উচ্ছৃঙ্খলতাকেই বৈধতা দানের’ চেষ্টা বলে সমালোচনা করছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, বিধিসম্মত বিয়ের বাইরে শারীরিক সম্পর্ক ইসলামে নিষিদ্ধ।
সৌদি আরবে কয়েক দশক ধরেই অস্থায়ী বিয়ের প্রচলিত একটি ব্যবস্থা আইনি বৈধতা পেয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে সহাবস্থান এবং স্ত্রীর ভরণপোষণের খরচ বহন করার মতো কিছু অধিকার থেকে স্বামীকে অব্যাহতি দিয়ে থাকেন স্ত্রী। তবে মিসইয়ার বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে যেন কোনোরকম শর্ত বা দায়বদ্ধতাই নেই। যা আছে, তা হলো গোপনীয়তা ও লজ্জা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন বিয়েতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি আছে। তারপরও কিছু নারীর কাছে এই পদ্ধতি পুরুষতান্ত্রিক প্রচলিত বিবাহব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায়। আবার অবিবাহিত দম্পতিরা একে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে একধরনের বৈধতার আবরণ হিসেবে বিবেচনা করেন। যদিও ইসলামে বিবাহবহির্ভূত যেকোনো শারীরিক সম্পর্কই নিষিদ্ধ।
ওই ব্যবস্থা সম্পর্কে ৪০-এর কোঠার বয়সী এক সৌদি সরকারি কর্মীর দাবি, ‘মিসইয়ার বৈধ পন্থায় আরাম, স্বাধীনতা ও সাহচর্যের মাধ্যম।’ তিরিশোর্ধ্ব বয়সী এক নারীর সঙ্গে দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এমন সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন।
সব বিতর্কের মধ্যেই ক্রমে চুক্তি ভিত্তিক নামমাত্র বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে সৌদিআরবে। শর্তহীন এই বিয়ে সৌদি সমাজে ‘মিসইয়ার’ নামে পরিচিত। তবে এই বিয়ে নিয়ে চিন্তিত সৌদির ‘ধর্মীয়’ ব্যক্তিরা। তাদের অভিযোগ ‘মিসইয়ার’-এর মাধ্যমে আদতে উচ্ছৃঙ্খলতাকেই বৈধতা দান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী বিয়ের আগে সহবাস অবৈধ। তবে এই মিসইয়ারের আড়ালে সৌদি ব্যক্তিরা ‘লিভ-ইন’ বা পরকীয়ায় মেতেছেন। এর জন্যে বিশেষ ‘ম্যাচ-মেকিং’ সাইটা বা গ্রুপও আছে সোশ্যাল মিডিয়াতে।
স্থানীয় নাগরিকদের মতো সৌদি আরবে বসবাসকারী প্রবাসী কর্মীরাও এ ধরনের বিয়েতে ঝুঁকছেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। নিজেদের পার্টনার খুঁজতে অনলাইনে বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপ ও বিয়ের ঘটকালিতে নিয়োজিত ওয়েবসাইটের শরণাপন্ন হচ্ছেন তারা।
এদিকে, সৌদি বিচার মন্ত্রণালয়ের কিছু সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির আল-ওয়াতান সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, শর্তহীন এসব বিয়ে বেশি দিন টেকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গড়পড়তা ১৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কের অবসান ঘটে।
এসডব্লিউ/এসএস/০৭৫৩
আপনার মতামত জানানঃ