ইউক্রেন সংকটকে চাইলে আমেরিকা থামাতে পারতো। কিন্তু থামায়নি। আর আমেরিকার এমনটা করার কারণ স্পষ্ট হচ্ছে এখন। মূলত রাশিয়ার আক্রমণ এককাট্টা করেছে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোকে৷ শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগা অনেক রাষ্ট্র এখন ৩০ সদস্যদেশের এই জোটে যুক্ত হবার ব্যাপারে ভাবছে৷ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এরই মধ্যে তাদের আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছে৷
এই যুদ্ধ এড়ানো যেতো এবং সেটা করতে পারতো আমেরিকায়ই। রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে পাত্তা না দিয়ে মার্কিন প্রশাসন ও পশ্চিম ইউরোপ চেয়েছে ইউক্রেন-কে ন্যাটোভুক্ত করতে। ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত করার অর্থ হলো রুশ সীমান্তে থাকবে মার্কিন ও ন্যাটোর বাহিনী, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। ১৯৯০-এ সোভিয়েতের পতনের পর রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ জোট নেই, তবুও সম্প্রসারণ ঘটছে ন্যাটোর।
আমেরিকার উদ্দেশ্য রাশিয়াকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা। পুতিন রাশিয়ার এই নিরাপত্তা হুমকি সম্পর্কে ভাল করেই জানেন। তাই সরাসরি বলে দিয়েছিলেন পূর্ব দিকে ন্যাটোর আর কোনো অগ্রগতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। তবে এই অগ্রগতি আটকাতে পারলো না রাশিয়া।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ যে আখেরে ন্যাটোর উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হয়ে উঠছে, এই নিয়ে বিশ্ব জুড়ে হওয়া আলোচনা আর দ্বিধাদ্বন্দ্বের মুখে ছাই দিল ন্যাটোর সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্ত। পূর্ব ইউরোপে তিন লাখ সেনা মোতায়েন করতে চাইছে ন্যাটো। এই সেনারা মূলত রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ব ইউরোপের সীমান্তে নজরদারি চালাবে বলে জানিয়েছেন ন্যাটোপ্রধান স্টলটেনবার্গ। মঙ্গলবার মাদ্রিদে শুরু হচ্ছে ন্যাটোর বার্ষিক সম্মেলন। তার আগে একথা জানালেন ন্যাটো প্রধান স্টলটেনবার্গ।
সোমবার ব্লাসেলসে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানেই তিনি একথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের পর এত বড় উত্তেজনা আর তৈরি হয়নি। সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবারই মাদ্রিদে ন্যাটোর বার্ষিক সভা শুরু হবে। জার্মানির ব্যাভারিয়া থেকে জি-৭ এর নেতারা সেখানে যোগ দিতে যাবেন। তার আগে ন্যাটো বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তার রূপরেখা জানান স্টলটেনবার্গ। তিনি বলেছেন, ন্যাটোর এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই ন্যাটো ৪০ হাজার সেনা পূর্ব ইউরোপের স্ট্র্যাটেজিক জায়গায় মোতায়েন করেছিল। এবার সেই সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
থিংকট্যাংক গ্লোবগ্লোবসেকের প্রধান জানিয়েছেন, ন্যাটোর এই পদক্ষেপ এই সময়ের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার কথায়, ফ্রান্স ইতিমধ্যেই রোমানিয়ায় সেনা এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। এবাবেই গোটা পূর্ব ইউরোপ ঘিরে ফেলতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২০০৬ সালে ন্যাটোর বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, প্রতিটি সদস্য দেশ নিজেদের জিডিপি-র দুই শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করবে। বারাক ওবামার সময় মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন জিম টাউনসেন্ড। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়ছেন, ন্যাটো ওই সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবে দেখা যেত সব সদস্য তা মানছে না। এবারের সভায় সে বিষয়ে ফের আলোচনা দরকার। সমস্ত রাষ্ট্র যাতে ন্যাটোয় সমান বিনিয়োগ করে, তা দেখা দরকার। ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তুরস্কের প্রধান এর্দোয়ান জানিয়ছেন, তিনি এই ভাবনার সঙ্গে সহমত নন। এবিষয়ে ভোটাভুটি হলে তিনি ভেটো দেবেন বলেও জানিয়েছেন এর্দোয়ান। বস্তুত, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন নিয়ে এর্দোয়ানের যে আপত্তিগুলি ছিল, তা নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার সমাধান হয়নি। ন্যাটোপ্রধান জানিয়েছেন, এবারের বৈঠকে ওই বিষয়গুলির সমাধানসূত্রও খোঁজা হবে। ন্যাটোর ঐক্য অটুট রাখা জরুরি। এবারের বৈঠকে সেই বিষয়টিতেই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭১০
আপনার মতামত জানানঃ