পাকিস্তানে খুন, গুম ও জোরপূর্বক অপহরণের বিষয়টি অনেক পুরনো হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তানে রবিবার (১৯ জুন) দুইটি পৃথক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সামাজিক সংগঠনের চার স্বেচ্ছাসেবীসহ ৬ জন নিহত হয়েছে। খবর ডন।
দেশটির পুলিশ ও বাসিন্দারা বলেন, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মোটরসাইকেলে করে মিরালি তেহসিল এলাকার হায়দারখেলে একটি চলন্ত গাড়ির ওপর ছুলি ছুড়ে। এতে সামাজিক সংগঠন ইয়ুথ অব ওয়াজিরিস্তানের চার কর্মী নিহত হয়েছে।
নিহতরা হলেন, ওয়াকার আহমেদ দাওয়ার, সুনাইদ আহমদ দাওয়ার, আমাদ দাওয়ার এবং আসাদউল্লাহ। মিরালি শহরের হাসপাতালে লাশ পাঠানো হয়েছে।
জারব-ই-আজব সামরিক অভিযানের পর এই সংগঠনটি গঠিত হয়। সংগঠনটি জঙ্গিবাদ কবলিত অঞ্চলে শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করে। সংগঠনটি টার্গেট কিলিং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচিও দেয়।
প্রায় দুই বছর আগে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ইয়ুথ অব ওয়াজিরিস্তানের আয়োজিত একটি অবস্থান কর্মসূচির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নূর ইসলাম দাওয়ারকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে রবিবার মিরালি শহরের একটি বাজার থেকে অপহৃত দুই জনের গুলিবিদ্ধ লাশ টচি নদীর কাছে পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের দায় কেউ স্বীকার করেনি বলে খবরে বলা হয়েছে।
খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপিকে) ও বেলুচিস্তান অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূলে ২০১৭ সালে অপারেশন রাদ-ইউআই-ফাসাদ (আরইউএফ) ঘোষণা করেছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এই অঞ্চলগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদ আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও অভিযানকে সফল দাবি করে এর সমাপ্তি ঘোষণা করেছে সেনাবাহিনী। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠেছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, অপারেশন রাদ-ইউআই-ফাসাদ (আরইউএফ) সমাপ্ত করা হয়েছে। দুই দশক-ব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই অভিযানটিকে একটি বড় সাফল্য বলে দাবি করে সংস্থাটি।
২০১৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সারা দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানের অশান্ত এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে আরইউএফ অভিযান চালু করে। তবে গত ৫ বছরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা বরং বৃদ্ধিই পেয়েছে।
অভিযান শেষ ঘোষণা করা হলেও পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর প্রায় নিয়মিত হামলা চলছে। ফলে নতুন করে সরকারকে আরও রক্ষী মোতায়েন করতে হচ্ছে।
আরইউএফ অভিযানের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লুকিয়ে থাকা গোষ্ঠী বা ‘স্লিপার সেল’ নির্মূল করা। তবে অভিযানের যে সফলতা দাবি করা হয়েছে তা সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো দেশটিতে সন্ত্রাসবাদের হুমকি রয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর হতাহত ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় উদাসীন চিন্তার কারণে আরইউএফ পাকিস্তানে একটি বিতর্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় জনগণের সমর্থন ছাড়া একটি বিদ্রোহ বিকাশ পায় না। কয়েক দশক ধরে পাক বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তারা জনগণের থেকে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় টেকসই চিন্তা না থাকায় সেনা যুদ্ধের যে প্রকল্প নিয়েছে পাক সরকার। তা চূড়ান্ত ব্যর্থ বলেই প্রকাশ পেয়েছে। আরইউএফের মতো অভিযান তাই ব্যর্থ হওয়ারই ছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৮
আপনার মতামত জানানঃ