অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের গণকর্মসূচি শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্বের প্রতিটা মানুষ ঘর থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হত। সবার মনে একই প্রশ্ন এখন, টিকা নিয়েই কি কোভিড পূর্ববর্তী জীবনে ফিরে যাওয়া যাবে? আগে যেমন মাস্ক ছাড়া যেখানে সেখানে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়া যেত, সেসব কী করা যাবে? উত্তর হল— না, একেবারেই সেটা করা যাবে না। করোনা প্রতিরোধে এখনও পর্যন্ত সবথেকে কার্যকরী হিসেবে যে সব প্রতিষেধকের খবর এসেছে সেই সবগুলোই সংক্রমণ হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। টিকা নেওয়া ব্যক্তি তা বহন করবেন না তা বলা হয়নি টিকা উদ্ভাবনকারীদের পক্ষ থেকে। তাই আরো দীর্ঘদিন ধরে হয়ত আমাদের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন-যাপন করতে হবে।
প্রতিষেধক নেওয়া একজন ব্যক্তি হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন না, বা তাঁর কোনও লক্ষণ চোখে পড়বে না। কিন্তু তিনি নিঃশব্দে তা ছড়িয়ে দিতে পারেন অন্যদের মাঝে। মাস্ক না পরলে এবং শারীরিক দূরত্ববিধি না মানলে তা বেশিমাত্রায় হবে, বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে টিকা না পাওয়া মানুষের জন্য আসবে চরম বিপদ। আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ মিশাল টাল বলছেন, বহু মানুষের ধারণা, একবার টিকা নিলে আর মাস্ক পরার দরকার হবে না। কিন্তু তাঁদের জানা দরকার টিকা নেওয়ার পরেও মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে।
শ্বাসযন্ত্রের বেশিরভাগ সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রধান পথ নাক। নাকের মধ্যে জীবাণু খুব দ্রুত সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। একবার সেই সমস্যা থেকে সুস্থ হওয়ার পর ফের যখন একই ভাইরাস আক্রমণ করে তখন শরীরে তৎক্ষণাৎ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। কোভিডের প্রতিষেধক টিকা সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাংসপেশির গভীরে দেওয়া হয়। এতে রোগ প্রতিরোধ করতে শরীরে নতুন অ্যান্টিবডির সৃষ্টি হয়। এই অ্যান্টিবডিগুলোর কিছু অংশ রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে নাকের মিউকোসায় প্রবেশ করে সেখানে পাহারা দেয়। কিন্তু অ্যান্টিবডির কতখানি অংশ নাকে আসবে এবং কত দ্রুত আসবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদি প্রশ্ন দু’টির উত্তরনা হয়, বা যতটুকু এন্টিবডি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রক্তের সাথে নাকে আসা প্রয়োজন, ততটুকু না এলেই বিপদ।
সেক্ষেত্রে নাকের মধ্যে ফের বংশবৃদ্ধি করবে কোভিড ভাইরাস এবং হাঁচির মাধ্যমে বা নিঃশ্বাসের সঙ্গে বাহিত হয়ে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে যাবে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিনোজিস্ট মারিয়ন পেপার বলছেন, ‘এটা একটা রেস। ভাইরাস আগে সংখ্যায় বাড়বে, নাকি প্রতিষেধক আগে তাকে কাবু করতে পারবে, তার ওপরেই সবটা নির্ভর করছে।’ এ কারণেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মাংসপেশিতে ইনজেকশনের চেয়ে নাকে দেওয়া যায় এমন স্প্রে-র ওপর বেশি ভরসা করেন। ভবিষ্যতে হয়তো করোনার জন্যও এমন ন্যাসাল স্প্রে দেওয়া প্রতিষেধক চলে আসতে পারে। তবে মোদ্দা কথা এই যে, টিকা নিয়েও মাস্ক খুলে ফেলা যাবে না, অন্তত গোটা বিশ্বের প্রত্যেকে যতদিন না প্রতিষেধক পাচ্ছে। তাই টিকা আসলেও আগামী কয়েকবছর আপনাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই উত্তম।
আপনার মতামত জানানঃ