বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকের পর সব ধরনের তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা বিক্রি হলেও এখন থেকে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১৯৮ টাকায় বিক্রি হবে।
এছাড়া সবচেয়ে বেশি বাড়নো হয়েছে খোলা তেলের দাম। আগে খোলা তেল ১৩৬ টাকায় প্রতি লিটার বিক্রি হলেও নতুন দাম অনুযায়ী ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে। অর্থাৎ খোলা তেলে দাম লিটার প্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া ৪২ টাকা বাড়িয়ে পাম তেলের দাম করা হয়েছে ১৭২ টাকা। যা আগে ছিল লিটার প্রতি ১৩০ টাকা
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফাচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হবে ৯৮৫ টাকায়। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ১ লিটার ১৮০ টাকা ও পাম তেল ১ লিটার বিক্রি হবে ১৭২ টাকায়।
এক বছর আগেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার ছিল ১৩৪ টাকা করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকায়। ব্যবসায়ীরা মার্চ থেকে লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার রাজি না হলে সেদিন থেকে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়।
এরপর সরকার ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিক্রির ওপর থেকে ভ্যাট পুরোপুরি আর আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখে বাকি সব ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। পরে গত ২০ মার্চ লিটারে আট টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৬০ টাকায়। সেদিন ৫ লিটারে ৭৯৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৭৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের দাম ১৪৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
জানা গেছে, সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফাচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে তেল পরিশোধনকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর বিকালে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর বিশ্ব ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সূর্যমুখী তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
কারণ বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের বড় রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন। ফলে সেখানে যুদ্ধের কারণে তেল সরবরাহ হুমকিতে পড়েছে। ফলে সারা বিশ্বে রাতারাতি বেড়েছে সূর্যমুখী তেলের দাম।
অন্যদিকে বিশ্বে সয়াবিন তেলের উপাদান সয়াবিন বড় রপ্তানিকারক দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেখানে খরায় এই বছর উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে বিশ্ব বাজারে সয়াবিনের দাম দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। ভারতের মতো কিছু দেশ বিকল্প হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য দেশ থেকে সয়াবিন আমদানি করার চেষ্টা করছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুদিন আগে পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। সেটাও বাড়তি চাপ তৈরি করেছে অন্যান্য তেলের ওপরে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই মাসে বাড়তে বাড়তে সয়াবিন তেলের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে, যা গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে।
যুক্তরাজ্যে, স্পেন, গ্রীস, তুরস্ক এবং বেলজিয়ামের একাধিক সুপারমার্কেট চেইন ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, সবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ক্রেতারা যেন অতিরিক্ত ভোজ্য তেল না কেনেন। যুক্তরাজ্যের বড় সুপারমার্কেট টেসকো ক্রেতাদের জনপ্রতি তিন বোতলের বেশি ভোজ্য তেল বিক্রির সীমা বেঁধে দিয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২১২২
আপনার মতামত জানানঃ