দারিদ্র্যে জর্জরিত জনাকীর্ণ উপকূলীয় উপত্যকা গাজা। গাজা উপত্যকায় সৌন্দর্য, প্রেম ও যুদ্ধের এক পাথরের প্রাচীন মূর্তি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৪৫০০ বছরের পুরোনো এই মূর্তি ব্রোঞ্জ যুগের।
ফিলিস্তিনের প্রত্নতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, এটি প্রাচীন সেমেটিক কানানী ধর্মের দেবী আনাতের মস্তক।
জমি চাষ করতে গিয়ে এই মূর্তি আবিষ্কার করেন খান ইউনিস নামের গাজার দক্ষিণ উপত্যকার এক কৃষক।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মূর্তি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন বেশ কয়েকজন গাজাবাসী। তারা মনে করছেন, এই দেবীর সঙ্গে যুদ্ধের সম্পর্ক রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, হামাস শাসিত গাজায় বেশ কয়েকবার ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে নিজেদের দুর্দশার পেছনে এই মূর্তিকে দায় করছেন তারা।
চুনাপাথরের এই মূর্তির আবিষ্কার এটাই মনে করিয়ে দিচ্ছে, কেমন ছিল ওই উপত্যকার ইতিহাস। যা ছিল প্রাচীন সভ্যতাগুলোর সফল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ। সে সময় মূলত এই অঞ্চলের অধিবাসীরা ছিল কানানী ধর্মের।
২২ সেন্টিমিটারের (৮.৭ ইঞ্চি) দেবী মুখাবয়বের মূর্তিটির মাথায় রয়েছে সর্প মুকুট। এটি পাওয়ার প্রসঙ্গে আরেক কৃষক নিদাল আবু ঈদ বলেন, ‘আমরা এটা ঘটনাক্রমে পেয়েছি। এটা কাদায় মাখা ছিল এবং আমরা তা পানিতে পরিষ্কার করেছি।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, হামাস শাসিত গাজায় বেশ কয়েকবার ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে নিজেদের দুর্দশার পেছনে এই মূর্তিকে দায় করছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বুঝেছিলাম, এটা মূল্যবান বস্তু। তবে আমরা জানতাম না এর এত বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য আছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা গর্বিত যে ফিলিস্তিনে কানানীয় যুগ হতে এটা আমাদের জমিতে ছিল।
কানানীয় দেবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আনাতের এই মূর্তি এখন শোভা পাচ্ছে কাসার আল-বাশায়। গাজার কয়েকটি জাদুঘরের মধ্যে ঐতিহাসিক বস্তুর সংরক্ষণেল জন্য এই বিল্ডিংয়ের সুনাম রয়েছে।
ভূমধ্যসাগরের তীর বরাবর প্রাচীন বাণিজ্য ও নৌপথের ধার ঘেঁষে অবস্থানরত গাজা উপত্যকা ১৯১৭ সালের আগে অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। গত শতকে এটি ব্রিটিশদের থেকে মিসরীয়, এরপর ইসরায়েলের সামরিক শাসনের অধীনে আসে। বর্তমানে এখানে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস। মাত্র ১৪০ বর্গমাইল এলাকায় তাদের বসবাস যা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর একটিতে পরিণত করেছে গাজাকে।
১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পরপরই ইহুদি ও আরবদের মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকে। ১৯৪৮-৪৯ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের গঠনের পর গাজা মিসরীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু মিসর কখনোই গাজা অধিগ্রহণ করেনি।
আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিণতিতে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়া হাজারো ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয় গাজায়। ১৯৬৭ সালের জুনে ছয় দিনের যুদ্ধে মিসর থেকে গাজা দখল করে নেয় ইসরায়েল।
২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর একতরফাভাবে গাজা থেকে অধিবাসী এবং সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয় ইসরায়েল। এতে ৩৮ বছরের ইসরায়েলি দখলদারির অবসান ঘটে। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৬ সালে এক ইসরায়েলি সেনাকে আটকের অভিযোগে গাজায় অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। এদিকে ২০১৩ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি উৎখাত হওয়ার পর গাজার রাফাহ সীমান্ত প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় কায়রো। তখন থেকে গাজার একমাত্র প্রবেশদ্বার ইসরায়েলের আর নিয়ন্ত্রণে নেই।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৭
আপনার মতামত জানানঃ