মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে করা একাধিক দুর্নীতি মামলার একটির রায় আজ সোমবার ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। সেনাশাসিত দেশটির আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৫ বছরের সাজা হতে পারে। খবর রয়টার্সের।
গত বছরের সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সু চি। এর পর থেকে এই নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উসকানি ও দুর্নীতি থেকে শুরু করে নির্বাচনী, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মোট ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর প্রতিটিতে পৃথকভাবে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড হতে পারে তার। আর সেটি হলে সু চির মোট সাজার মেয়াদ ১৫০ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও ৫টি অভিযোগ এনেছিল জান্তা সরকার। সেসময় জানানো হয়েছিল, এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিটির জন্য ১৫ বছর করে কারাভোগ করতে হতে পারে তাকে।
এখন পর্যন্ত অং সান সু চি দুটি তুলনামূলক ছোট অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তার ছয় বছরের সাজা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে যত মামলা সবগুলোর বিচার শেষ হতে কয়েক বছর লাগতে পারে। এসব মামলা ও সাজা পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে পরিচিত মুখটির ফের রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।
মামলার বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইয়াঙ্গুনের সাবেক চিফ মিনিস্টার ফিও মিন থেইনের কাছ থেকে ৬ লাখ ডলার ও ১১ দশমিক ৪ কেজি স্বর্ণ ঘুষ নেওয়ার মামলায় আজ রায় দিতে পারেন বিচারক। একসময় ফিওকে সু চির উত্তরসূরি মনে করা হতো।
সু চির এ শিষ্য অক্টোবরে সাক্ষ্য দেন, সমর্থন পেতে তাকে এই অর্থ ও স্বর্ণ দিয়েছিলেন তিনি। তার এই সাক্ষ্য জাতীয় টেলিভিশনে আলাদাভাবে সম্প্রচার করে সেনা সরকার। তবে এই অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ মন্তব্য করে নাকচ করে দেন সু চি।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ৭৬ বছর বয়সী সু চির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ইতোমধ্যে প্রায় এক ডজন মামলা করেছে মিয়ানমারের জাতীয় ক্ষমতায় আসীন জান্তা। রাজধানী নেইপিদোর জান্তানিয়ন্ত্রত আদালতেই বিচার চলছে সেসব মামলার।
সব মামলায় যদি সু চি দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে তাকে কারাগারে কাটাতে হবে দেড়শো বছরেরও বেশি সময়। সু চি অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
এর আগে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি এবং কোভিড-১৯ প্রোটোকল লঙ্ঘনের মাধ্যমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ভাঙার দায়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সু চিকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন দেশটির একটি আদালত। সরকারের শীর্ষ পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১১ মাসের মাথায় তার বিরুদ্ধে দেওয়া প্রথম কোনো রায় ছিল সেটি।
তবে সু চির বিরুদ্ধে এই রায়ের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সেসময় আদালত সু চিকে চার বছরের কারাদণ্ড দিলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পরে সেটি দুই বছর কমিয়ে দেয় জান্তা সরকার।
এরপর অবৈধ ওয়াকিটকি রাখাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে অং সান সু চিকে আরও চার বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তিনি ৬ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন।
অজ্ঞাত স্থানে ৭৬ বছর বয়সী সু চিকে আটকে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয় না। নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
সু চির বিচার–সম্পর্কিত তথ্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সেনা সরকার। এ নিয়ে তার আইনজীবীকে মুখ খুলতেও বারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বিচারকে প্রহসন আখ্যা দিয়েছে।
তবে সেনা সরকারের দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনে একটি স্বাধীন আদালতে সু চির বিচার হচ্ছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সুচির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় জান্তা সরকার। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ২০২০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতিসহ অন্যান্য অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে দেশটির সামরিক বাহিনীর আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩২৫
আপনার মতামত জানানঃ