ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও অত্যাচার শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এ নিয়ে এবার সোচ্চার হয়েছেন আমেরিকান-ফিলিস্তিনি সুপারমডেল বেলা হাদিদ। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তিনি।
একই সঙ্গে পোস্ট সেন্সর করা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ইন্সটাগ্রামকেও এক হাত নিয়েছেন।
মার্কিন সুপার মডেল বেলা হাদিদ জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের বর্বরতা নিয়ে দেওয়া পোস্ট ব্লক করে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম।
ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত এ সুপার মডেল বলেন, আমার যে কোনো পোস্ট ১০ লাখ ফলোয়ার দেখেন।
পবিত্র আল-আকসায় অবৈধ ইহুদি বসতকারী ও ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে তা নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ব্লক করে দেওয়া হয়। খবর আনাদোলুর।
ফ্যাশন ম্যাগাজিন হারপার্স বাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুপার মডেল বেলা হাদিদ তার এ কথা জানান।
গতকাল নিজের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে দুটি ভিডিও পোস্ট করেন বেলা হাদিদ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে ইসরায়েলি সেনারা। অনুসারীদেরকে আহ্বান জানান ভিডিওগুলো দেখার জন্য। বেলা হাদিদ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই লোকদের মধ্যে কে এ ধরনের আক্রমণকে উস্কে দিয়েছে?’
ইন্সটাগ্রামকে ট্যাগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের মতো আমাকেও যদি আপনারা চুপ করাতে চান, আমি শান্তির বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসবো। এবং দেখাবো কীভাবে আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী), ইসরায়েলি সরকার এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা কোনো কারণ ছাড়াই নির্দোষ ফিলিস্তিনিদের আক্রমণ করছে। লোকগুলোর অপরাধ তারা ফিলিস্তিনি। এসব সম্পর্কে বাস্তব তথ্য দেখাবো আমি।’
এটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন এই সুপারমডেল। বেলা হাদিদ বলেন, ‘যদি ফিলিস্তিনের পক্ষে আওয়াজ তোলার জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো সেন্সর অব্যাহত রাখে, তাহলে তা হবে পক্ষপাত ও অন্যায় সেন্সরশিপের সবচেয়ে বড় রূপ।’
এ সময় অনুসারীদের তিনি মনে করিয়ে দেন যে, শেয়ার করা ভিডিওগুলোর সবই বাস্তব ঘটনা। মার্কিন এই সুপারমডেল বলেন, ‘আমি এই ধরনের সন্তাসী কার্যক্রমের পোস্ট দিতে চাই না। কিন্তু বিশ্বাস করেন ভিডিওর লোকগুলো অভিনেতা নন। তারা সত্যিকারের আইডিএফ সৈন্য এবং ফিলিস্তিনি মানুষ। আপনারা যদি চান আমি কথা বলা বন্ধ করি, তাহলে তাদের (ইসরায়েল) অবশ্যই হত্যা বন্ধ করতে হবে।’
গত শুক্রবার জেরুজালেমে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
এতে নারী-শিশুসহ শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হন এবং অসংখ্য নিরপরাধ মুসল্লিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ইসরায়েলি পুলিশ।
রোববার ইসরায়েলি বাহিনীর ছত্রছায়ায় আল-আকসায় প্রবেশ করে জেরুজালেমে অবৈধ ইহুদি বসতিগুলোর সাত শতাধিক বাসিন্দা।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। আল-আকসা পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত। ১৯৮০ সালে দখলদার ইসরায়েলিরা জেরুজালেম দখল করে নেয়।
তবে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ইসরায়েলবিরোধী পোস্ট মুছে ফেলা নতুন ঘটনা নয়। ফিলিস্তিনভিত্তিক ডিজিটাল অধিকার সংস্থা ‘হামলেহ’-এর একটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ৭৪৬টি অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে তারা।
গত বছর মে মাসে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ ফেসবুকের নির্বাহীদের ইসরায়েলবিরোধী পোস্টের বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
ইসরায়েলের জন্য ক্ষতিকারক এমন বিষয়বস্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অপসারণে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রয়টার্সের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি কর্মী ও লেখক মোহাম্মদ এল-কুর্দের পোস্ট অবনমনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এল-কুর্দ বলেছেন, ইনস্টাগ্রামে তার ৭ লাখ ৪৪ হাজার অনুসারী থাকলেও, মে মাসে শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভের সময় তার ইনস্টাগ্রামের ভিউ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়।
তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আমার অ্যাকাউন্টের এই ভিত্তিহীন নীরবতা সন্দেহ করছি।’
ফিলিস্তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী তালা গন্নাম বলেছেন, ‘কমিউনিটি গাইডলাইন’ লঙ্ঘনের অভিযোগ তাঁর পোস্টগুলো ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে মুছে ফেলা হয়েছে; বিশেষ করে উচ্ছেদের ঝুঁকিতে থাকা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর সমর্থনে #SaveSheikhJarrah ট্যাগ করা পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই সময় মনে হয়েছিল আমার মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা নেই।’
ইসরায়েলের অত্যাচার
জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদে ফের ইসরায়েলি পুলিশ প্রবেশ করেছে। আল আকসা প্রাঙ্গণে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষের মাত্র দুদিন পর স্থানীয় রোববার ফজরের নামাজের সময় ফের সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
এতে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি আহত হন বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি তারা পবিত্র ওই স্থাপনাটিতে ইহুদিদের নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে রোববার আল-আকসা ভবনে প্রবেশ করে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা আগে থেকেই সেখানে পাথর জমা করে রেখেছিল। ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রবেশে বাধা দিতে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ব্যারিকেডও তৈরি করে।
এদিকে, মসজিদের বাইরের এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। তবে মসজিদের ভেতরেও কয়েকজন ফিলিস্তিনি অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে ১৫২ জন আহত হন। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন আরও ৩০০ ফিলিস্তিনি।
শুক্রবার ফজরের নামাজের সময় কয়েক হাজার মুসল্লি আল আকসা মসজিদে যান। ইহুদি দর্শনার্থীদের চলাচলের পথ করে দিতে সে সময় মুসল্লিদের বেধড়ক পেটায় ইসরায়েলি পুলিশ। এতে আহত হন অন্তত ১৫৮ জন, আটক হন ৩০০ ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট আরও জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসকদের যেতেও বাধা দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। ৬৭ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতলে নেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধের ঘোষণা
দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইসরায়েলি পুলিশের হামলাকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে দেখছে ফিলিস্তিনিরা।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ যে কোনো মূল্যে আল-আকসা মসজিদকে রক্ষা করবে। জেরুজালেমে ‘অনুপ্রবেশকারী’দের জায়গা নেই।
জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদের সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ হতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
হামাসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী এবং ইহুদি সম্প্রদায় পবিত্র এই স্থানটি দখলের চেষ্টায় মত্ত। এই আগ্রাসন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
শুক্রবার ফজরের নামাজের সময় কয়েক হাজার মুসল্লি আল-আকসা মসজিদে যান। ইহুদি দর্শনার্থীদের চলাচলের পথ করে দিতে সে সময় মুসল্লিদের বেধড়ক পেটায় ইসরায়েলি পুলিশ। এতে আহত হন অন্তত ১৫৮ জন, আটক হন ৩০০ ফিলিস্তিনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০৭
আপনার মতামত জানানঃ