আসলেই কি ভিনগ্রহবাসী বা এলিয়েনদের দেখা মিলবে? দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের মনে এই প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই এলিয়েনদের খুঁজে পাওয়া কিংবা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নিছকই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বিষয় বলেই মনে করেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে ভিন্ন কথা।
মহাকাশ, মহাজাগতিক ব্যাপার-স্যাপার নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই, জানার চেষ্টারও শেষ নেই মানুষের। নানা সময়ে নানা কিছু তাই সামনে আসে আমাদের।
পৃথিবীর বাইরে কি কোনও জীবন রয়েছে? বিজ্ঞানীরা ভিনগ্রহে জীবনের অনুসন্ধান করেই চলেছেন নিরন্তর। সেজন্য মানুষ মঙ্গল গ্রহে নিয়ে গিয়েছে তাদের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।
মঙ্গলেও কি পৃথিবীর মতো প্রাণ আছে? তা নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। মঙ্গলে পানির অস্বিত্ব খুঁজেই চলেছে নাসা। পানি থাকলেই থাকবে প্রাণ, এমন একটা সম্ভাবনা নিয়েও নানা গবেষণা চলেছে। কিন্তু এরই মধ্যে নাসার হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক ছবি। সেই ছবি বার্তা দিচ্ছে মঙ্গলে প্রাণ থাকলেও থাকতে পারে।
নাসা সম্প্রতি মঙ্গল গ্রহের একটি গর্তের ছবি শেয়ার করেছে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি পায়ের ছাপ। নেটিজেনরা বলছেন এটি ভিনগ্রহীদের পায়ের ছাপ। অর্থাৎ এলিয়েনদের পাযের ছাপের মতোই দেখতে সেই ছবি। নাসা ইনস্টাগ্রামে মঙ্গল গ্রহের ওই ছবি প্রকাশ করার পর থেকেই চর্চা চলছে। নাসার ওই ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মন্তব্য করা হয়েছে, ওই ছবি দেখতে ভিনগ্রহীদের পায়ের ছাপের মতো।
নাসা কর্তৃক প্রকাশিত মঙ্গল গ্রহের ওই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। স্পেস এজেন্সি মঙ্গল রিকনেসান্স অরবিটারে উচ্চ-রেজোলিউশন ইমেজিং সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট ব্যবহার করে ছবিটি তুলেছে। তা নাসার হাতে আসার পর ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করা হয়েছে। তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে একটা ক্যাপশন।
নাসা ইনস্টাগ্রাম ছবির ক্যাপশনে লিখেছে, ‘মঙ্গলের গর্তটি স্থানটিকে চিহ্নিত করেছে’। সেইসঙ্গে ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মানচিত্রটি এখানে প্রতি পিক্সেল ৫০ সেন্টিমিটার বা ১৯.৭ ইঞ্চি স্কেলে অনুমিত হয়েছে’। নাসার শেয়ার করা ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বেশ কয়েকজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী মন্তব্যও করেছেন।
ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীরা মধ্যে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘মঙ্গল গ্রহে একটি এলিয়েনের পদচিহ্নের মতো দেখাচ্ছে ওই ছবিটি’।
আবার একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ঈশ্বরের সমস্ত সৃষ্টিই সৌন্দর্যকে ধারণ করে এবং মহাবিশ্বও তার বাইরে নয়।
অন্য একজন ইনস্টাগ্রামে বলেছেন, ‘এমন কিছু দর্শনীয় জিনিস যা আপনাকে নির্বাক করে দেয়’!
ওই ছবির ক্যাপশনে নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পক্ষে আরও লেখা হয়েছে যে, একটি বৃহত্তর গর্ত একটি দ্বিতীয় পাথুরে অববাহিকার মধ্যে রয়েছে। এই গর্তকে বায়ুযুক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পোস্টটিতে আরও ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, এয়ারি ক্রেটার মূলত লাল গ্রহের জন্য শূন্য-দ্রাঘিমাংশ সংজ্ঞায়িত করেছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা গ্রহের পৃষ্ঠের আরও বিশদ চিত্রগুলি ক্যাপচার করা শুরু করলে, তাদের আরও সুনির্দিষ্ট মার্কার প্রয়োজনহয়। তাই বিদ্যমান মানচিত্র পরিবর্তন না করার জন্য নাসা ছোট গর্তটিকে নাম দিয়েছে ‘এয়ারি-০’ (এয়ারি শূন্য)।
নাসা সম্প্রতি মঙ্গল গ্রহের একটি গর্তের ছবি শেয়ার করেছে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি পায়ের ছাপ।
আরেকটি গবেষণায় নতুন আবিষ্কার একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। লাল গ্রহে কিউরিওসিটি রোভার ট্রন্ডলিং করে দেখা মিলেছে নতুন সম্ভাবনার।
সম্প্রতি কিউরিওসিটি রোভার যে ইঙ্গিত দিল তাতে অনেকে এবার বলতে পারেন, পৃথিবী থেকে বেশি দূরে নয়, আমাদের এই সৌরপরিবারেই রয়েছে আরও প্রাণের অস্তিত্ব।
আসলে এটা কেবলই একটা শুরু, একটা সম্ভাবনা। সেই ২০১২ সালে মঙ্গলে পা রেখেছে কিউরিওসিটি। সম্প্রতি কিছু নমুনা পাওয়া গেছে যেগুলো এক ধরনের কার্বন সমৃদ্ধ, যা পৃথিবীতে জৈবিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।
ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালে প্রসিডিংস অফ দ্য প্রোসিডিংস-এ প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণা রিপোর্ট। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে অস্বাভাবিক কার্বন সংকেতগুলির শনাক্ত করার কথা।
যদিও গবেষকরা জানান, আমরা মঙ্গল গ্রহে এমন কিছু খুঁজে পাচ্ছি যেগুলি আকর্ষণীয়, তবে আমরা জীবনকে চিহ্নিত করেছি তা বলার জন্য আদর্শ প্রমাণ নয়। মঙ্গলে জীবন আছে এমন সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো গেলেও এ আপডেট বহু আকাঙ্ক্ষিত।
গবেষকরাও বলছেন, মঙ্গলে যে প্রাণ আছে এখনই তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রশ্ন উঠছে কার্বনসমৃদ্ধ যে নমুনা পাওয়া গেছে তা যদি জীবনের ইঙ্গিত না হয় তবে সেটা কী?
বিজ্ঞানীরা আবার এ বিষয়টাও মাথায় রাখছেন যে, পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহ এতই আলাদা যে পৃথিবীর উদাহরণের ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
পৃথিবীর বাইরে অন্য কোন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না কিংবা বসবাস করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই গবেষক-বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছেন। বিশেষ করে মঙ্গলে গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধান পেতে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা প্রাণের অস্তিত্বের জন্য মূল উপাদান পানির সন্ধান করছিলেন মঙ্গল গ্রহে।
সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ। পৃথিবী থেকে অনেকটা লাল দেখানোর কারণে এর অপর নাম হচ্ছে লাল গ্রহ। পৃথিবীর মতই ভূ-ত্বক রয়েছে এ গ্রহে। এর ভূ-ত্বকে রয়েছে চাঁদের মত অসংখ্য খাদ, আর পৃথিবীর মত আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি এবং মেরুদেশীয় বরফ। সৌর জগতের সর্ববৃহৎ পাহাড় এই গ্রহে অবস্থিত। এর নাম অলিম্পাস মন্স। সর্ববৃহৎ গভীর গিরিখাতও এই গ্রহে যার নাম ভ্যালিস মেরিনারিস। ১৯৬৫ সালে মেরিনার ৪ মহাকাশযান প্রথমবারের মত মঙ্গল গ্রহ অভিযানে যায়। এই অভিযানের পর থেকে অনেকেই ধারণা করে আসছিলেন যে মঙ্গলে তরল পানির অস্তিত্ব আছে। মঙ্গল থেকে পাওয়া আলো এবং আঁধারের তরঙ্গের মধ্যে পর্যাবৃত্ত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে এই ধারণা করা হয়। বিশেষত মঙ্গলের মেরু অঞ্চল থেকে এ ধরণের পরিবর্তন চোখে পড়ে, যা মহাসাগর বা জলাশয়ের প্রমাণ হিসেবে অনেকেই গ্রহণ করেছিল।
গত বছরের শুরুর দিকে নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলের পৃষ্ঠের কাছাকাছি তরল পানি খুঁজে পেয়েছিল। এই আবিষ্কারের পর মঙ্গল গ্রহ যে একেবারেই ঠান্ডা ও শুষ্ক সে ধারণা থেকে সরে আসেন গবেষকেরা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মঙ্গলের পৃষ্ঠে এক ধরনের লবণের অস্তিত্ব আছে যা তরল পানিকে ফ্রিজিং পয়েন্টের নিচে একটি অবস্থায় যেতে সাহায্য করে।
নাসার ঘোষণায় বিশ্ব জুড়ে হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছিল। কেননা, মঙ্গলে পানি থাকা মানেই সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই লাল গ্রহে ভবিষ্যতে মানুষের বসতি স্থাপনের সম্ভাবনা তৈরি হলো।
শুধু তাই নয়, অবিশ্বাস্য চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পাওয়া গেছে মঙ্গলে। রহস্যময়, রক্তিম এ গ্রহে পানির পাশাপাশি আছে অক্সিজেনও। যা প্রাণের জন্য অত্যাবশ্যক। এর মানে এখানে জীবনেরও অস্তিত্ত্ব আছে। তাছাড়া মঙ্গলে অনেক মূল্যবান খনিজ পদার্থেরও সন্ধান পাওয়া গেছে বলে নাসার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ফলে মানুষের জন্য সম্ভাব্য বাসস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে একে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫৪
আপনার মতামত জানানঃ