গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩০০ টেরাবাইটের ডেটা সেন্টারে সরকারি সব তথ্য-উপাত্ত জমা রাখা হবে বলে সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেন্টারটির একটি ব্যাকআপ থাকবে যশোরে। যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কালিয়াকৈর ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যেন তথ্য হারিয়ে না যায়।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সাপ্তাহিক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এখন থেকে সরকারি সব ডেটা এখানে রাখা হবে…সরকারি সব ডেটার জন্য এটা বাধ্যতামূলক এবং এখানে পেমেন্টের মাধ্যমে সব ব্যক্তিগত ডেটাও সংরক্ষণ করা যাবে।’
তিনি জানান, এমনকি ডেটা সেন্টারের মালিকও কোনো সংস্থার ডেটাতে ঢুকতে পারবে না। যেসব সংস্থা ডেটা জমা করবে কেবল তাদেরই ওই সংশ্লিষ্ট ডেটাতে প্রবেশের অধিকার থাকবে। মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড শীর্ষক কোম্পানির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশনের সংশোধিত খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রাথমিকভাবে মূলধন হিসেবে সরকার এ কোম্পানিকে ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে এবং কোম্পানিটিকে নিজস্ব আয় দিয়ে ডেটা সেন্টারটি পরিচালনা করতে হবে। সরকারী নির্দেশ মোতাবেক প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কালিয়াকৈর ডেটা সেন্টারে নিজস্ব সার্ভার খুলতে হবে এবং সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের ডেটা এখানে সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। ওখানে সব সেফটি ও সিকিউরিটি থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সভায় আইসিটি বিভাগের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হয়। এ সংক্রান্ত উপস্থাপনায় ভবিষ্যতে যেসব প্রযুক্তি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে এমন ১০টি প্রযুক্তির কথা তুলে ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাব্যতা কাজে লাগিয়ে ১০টি প্রযুক্তির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রযুক্তিগুলো হলো- উন্নত উপকরণ, ক্লাউড প্রযুক্তি, স্বয়ংক্রিয় যানবাহন, সিন্থেটিক বায়োলজি, ভার্চ্যুয়াল অগমেনটেড রিয়েলিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবট, ব্লকচেইন, থ্রিডি প্রিন্টিং এবং ইন্টারনেট অব থিংস।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমরা কীভাবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে পরিচালনা করব তার ওপর আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করবে। যদি আমরা একে সঠিকভাবে চালনা করতে না পারি তবে আমাদের সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময়ে উত্পাদন ও সব প্রযুক্তি ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে তার কর্মশক্তিকে এ বিপ্লবের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, অর্থনীতি বা প্রযুক্তি বা অন্য সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হবে।
চতুর্থ প্রযুক্তির অংশ হিসাবে এরইমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা রোবট ব্যবহার শুরু করেছে বলে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি ও অনলাইনে তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সরকারের এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা খুব সহজ হবে না। এজন্য তরুণ প্রজন্মকে রাষ্ট্রিয় উদ্যোগে অধিক পরিমাণে ভর্তুকি দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রুযুক্তির নিরাপত্তা বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে দেশে বৃহৎ পরিসরে আইসিটি ক্যাম্পাস গড়ে তোলার বিকল্প নাই।
এসডব্লিউ/নসদ/০৯২০
আপনার মতামত জানানঃ