যুদ্ধ মানে শুধুই যুদ্ধরত দেশের মানুষের ক্ষতি এমন নয়। কোথাও যুদ্ধ বাধলে সেই প্রভাব গিয়ে পড়তে পারে হাজার মাইল দূরের কোনো দেশের মানুষের উপরও। চলমান ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাত নিয়ে এমন নানা সংকটের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এ কারণে অন্তত ৪ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছে সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট (সিজিডি) নামের একটি থিংকট্যাংক। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্বের ২৯ শতাংশ গম উৎপাদিত হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনে। এই বিশ্বের ৬ ভাগের ১ ভাগ সার আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে কৃষি বাণিজ্যের জন্য প্রাক্তন সোভিয়েত অঞ্চল কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন থিংকট্যাংক বলছে, যুদ্ধের ধাক্কা শুধু এই অঞ্চলেই নয়, সারা বিশ্বেই ব্যাপকভাবে অনুভূত হবে। এটি সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে দরিদ্র দেশগুলোকে।
সিজিডির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘জি-২০সহ শস্য উৎপাদনকারী দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের বাজার উন্মুক্ত ও নিষেধাজ্ঞামুক্ত রাখতে হবে। মানবিক প্রয়োজনকে সমর্থন দিতে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আরও দ্রুত ও উদারভাবে কাজ করতে হবে।’
এর আগে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলি বলেছিলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে খাদ্যের দাম এতটাই বেড়ে যাবে যে, তা বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
বিবিসি অপর এক প্রতিবেদন বলেছে, গত চার বছরে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি থেকে বেড়ে ২৭ কোটি ৭৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। নানা রকম যুদ্ধ-সংঘাত, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং করোনাভাইরাস মহামারি—সব মিলিয়ে একটা ভয়ংকর দুর্যোগ তৈরি হয়েছে।
যুদ্ধের ধাক্কা শুধু এই অঞ্চলেই নয়, সারা বিশ্বেই ব্যাপকভাবে অনুভূত হবে। এটি সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে দরিদ্র দেশগুলোকে।
গত ১১ মার্চ এ সংকট নিয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তারা বলেছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে ফসল চাষ অনিশ্চিত ও নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিতে সংশয় উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এফএও মহাপরিচালক কিউ ইউ ডং আশঙ্কাপ্রকাশ করে বলেন, এসব পণ্যের প্রধান দুই রপ্তানিকারকের কৃষিকাজে ব্যাঘাত বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
কৃষি বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেনের অনুপস্থিতিতে তৈরি ঘাটতির সামান্য অংশই অন্য দেশগুলো পূরণ করতে পারবে বলে মনে করছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা। তাদের মতে, এই সংকট বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পশুখাদ্যের দাম আট থেকে ২২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।
শুধু খাদ্য ও জ্বালানি নয় আরো অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যার অন্যতম কারণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ। মার্কিন মুলক ও ইউরোপ থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসছে রাশিয়ার উপর। আবার কে কার পক্ষে কথা বলেছে বা বলেনি কিংবা চুপ থেকেছে তার উপর নির্ভর করে পরিবর্ন হচ্ছে পূর্ করা আমদানি রফতানি চুক্তি। ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা ও সৈন্য প্রত্যাহারে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলেশনের পক্ষে ভোট না দেয়ায় বাংলাদেশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ভ্যাকসিন না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে লিথুয়ানিয়া।
ইউরোপীয় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র রাসা জাকিলাইটিয়েনে জানিয়েছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকার পর লিথুয়ানিয়া বাংলাদেশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে লিথুয়ানিয়া সরকার ফাইজারের তৈরি চার লাখ ৪৪ হাজার ৬শ’ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠানোর কথা ছিল।
সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, যাতে অনতিবিলম্বে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ান সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। ওই রেজ্যুলেশন বিষয়ে জাতিসংঘে দুইদিন উন্মুক্ত আলোচনা এবং বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। সেই আলোচনায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত রাশিয়াকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে প্রত্যক্ষ ভোটে জাতিসংঘে ওই রেজ্যুলেশন পাস হয়। এমন আরো কতো নিত্য নতুন সমস্যায় পরতে হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ