গোপনীয়তার জলে ভরা সুইস ব্যাংকিং। এক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকের নাম বেশি শোনা যায়। সারা দুনিয়ার বিত্তশালী এবং বিখ্যাত মানুষদের অঢেল অর্থ রাখার প্রথম পছন্দ সুইস ব্যাংক।
ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি আশা করে তা হলো গোপনীয়তা। যদি অবৈধ টাকা বা কালোটাকা হয় তবে গোপনীয়তাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়৷ আর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং এর সুনাম ঠিক এখানেই। ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর বা উকিলের সঙ্গে মক্কেলের যে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক ঠিক তেমনি সুইস ব্যাংক এর সঙ্গে তাদের গ্রাহকদের সম্পর্ক চরম বিশ্বাসের। সুইস ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত কোনো তথ্য কাউকেই দিতে বাধ্য নয়।
গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষায় খ্যাতি আছে সুইস ব্যাংকগুলোর। এ জন্য বিশ্বব্যাপী ধনকুবেরদের পছন্দের তালিকায় থাকে সুইস ব্যাংক। তবে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক যুদ্ধ চলছে রাশিয়ার।
এমন পরিস্থিতিতে রুশ গ্রাহকদের অর্থসম্পদের আনুমানিক পরিমাণ প্রকাশ করল সুইস ব্যাংকগুলো। যদিও বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক কারণ গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বিশ্বের ধনী মানুষদের জন্য সুইজারল্যান্ড ছিল স্বর্গ।
আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ড ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসবিএ) বৃহস্পতিবার বলেছে, সুইস অ্যাকাউন্টগুলোতে রুশ গ্রাহকের পরিমাণ ১৫০ থেকে ২০০ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (১৬০-২১৩ বিলিয়ন ডলার)।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইস ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ অর্থ দেখাচ্ছে তা এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হওয়া রুশ অর্থসম্পদের পরিমাণের থেকে অনেক বেশি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও যেই দেশটির ভূমিকা ছিল নিরপেক্ষ, সেই সুইজারল্যান্ড এবার ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইগনাজিও ক্যাসিস ঘোষণা দিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ রাশিয়ার ৩৭০ জন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে সুইজারল্যান্ড।
রুশ গ্রাহকদের অর্থসম্পদের আনুমানিক পরিমাণ প্রকাশ করল সুইস ব্যাংকগুলো। যদিও বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক কারণ গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বিশ্বের ধনী মানুষদের জন্য সুইজারল্যান্ড ছিল স্বর্গ।
‘ইউক্রেনে সামরিক অভিযান’ ঠেকাতে ও যুদ্ধের অর্থায়ন বন্ধে রুশ সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দেয়া এ অবরোধ কাজ দেবে বলে আশা করে সুইজারল্যান্ড।
তবে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষ অবস্থান পরিবর্তন করে রাশিয়াবিরোধী পশ্চিমা জোটে যোগদানও রাশিয়াকে ইউক্রেনের সামরিক অভিযান থেকে সরাতে পারছে না। কিয়েভের কাছেই অবস্থান নিয়েছে রুশসেনারা। যুদ্ধ চলছে খারকিভ, মারিওপোল, সুমিসহ ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলোতে।
এরই মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ গচ্ছিত রাখার পাশাপাশি এ সম্পদ অর্জনের পথ সবই গোপন রাখে সুইস ব্যাংক। সুইজারল্যান্ডের এই ক্রেডিট সুইস ব্যাংক বিশ্বের অন্যতম আইকনিক ব্যাংক। মূলত তথ্য গোপন রাখার কারণেই তারা বেশি আলোচিত। এখন এই ব্যাংকের গ্রাহকদের সম্পর্কে তথ্য ফাঁস হলো, যা বিশ্বাসঘাতকতাই।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে গ্রাহকের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য সুইজারল্যান্ড আইন সবচেয়ে কঠোর। সাধারণত ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে গেলে অর্থের উৎস জমা দেয়া ছাড়াও কর জমা দেয়ার ছাড়পত্র, ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি এবং বিদেশি হলে পূর্বের একাউন্ট বা লেনদেনের ইতিহাস জানতে চাওয়া হয় কিন্তু সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে হলে গ্রাহকের অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্নই করা হয় না। ন্যূনতম ১৮ বছর এবং একটি বৈধ পাসপোর্ট, শুধুমাত্র এই দু’টি জিনিস থাকলেই সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংকে অর্থ জমা রাখা যায়। এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে গ্রাহককে খুব উচ্চবিত্ত বা আভিজাত্যপূর্ণ হতে হবে। মাত্র ৫ হাজার সুইস ফ্রাঁ থাকলেই যে কেউ একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। সুইস ব্যাংকিং ব্যবসায় আফ্রিকার স্বৈরশাসক বা ল্যাটিন মাদক সম্রাট সকলকেই চিহ্নিত করা হয় একটি অদ্বিতীয় নাম্বার দিয়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইস ব্যাংকের দুনিয়াজুড়ে খ্যাতির তুলনায় কুখ্যাতি হয়ত বেশি। আইনের সুযোগ নিয়ে সুইস ব্যাংকগুলো হয়ে উঠেছে কর ফাঁকির স্বর্গ।
অনেকেরই ধারণা সুইস আইন তৈরি করা হয়েছে কালো টাকার মালিকদের জন্য। এটি কিন্তু একদম ভুল তবে হ্যাঁ এটা সত্য লুকোচুরির এই আইনের ব্যবহার করে যাচ্ছে আমেরিকার ধনকুবের থেকে শুরু করে তামাম এশিয়ার কর ফাঁকিবাজরা। সুইসরা তাদের ব্যাংকিং ঐতিহ্য ধরে রাখতে যেমন তৎপর তেমনি অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোও চাপ দিয়ে সুইসদেরকে তাদের আইন সংস্কার করাতেও তৎপর। ইতিমধ্যে সুইস ব্যাংক ইউরোপ এবং এর বাইরের কিছু দেশের সাথে পূর্ণ মাত্রায় তথ্য বিনিময় শুরু করেছে। তাহলে কি সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তার অধ্যায় শেষ হতে চলেছে? সত্যি কথা বলতে সময়ই সেটা বলে দেবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৮
আপনার মতামত জানানঃ