ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান আজ ১৪ মার্চ ১৯তম দিনে গড়িয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য চীনের কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া। মস্কোর কথিত এ অনুরোধের বিষয়ে বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাস বলেছে, রাশিয়ার এ ধরনের কোনো অনুরোধ সম্পর্কে তারা অবগত নয়। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করলে চীনকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি
পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাটোর কাছে আবার ‘নো-ফ্লাই জোন’ আরোপের আবেদন জানিয়েছেন। এ ঘাঁটিতেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার চারটি উড়োজাহাজ, তিনটি হেলিকপ্টার ও বেশ কয়েকটি মনুষ্যবিহীন আকাশযান ভূপাতিত করার দাবি করছে। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এ দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
কিয়েভের মার্কিন দূতাবাস দেশটির নাগরিকদের অবিলম্বে ইউক্রেন ত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আজ সোমবার আবার আলোচনা শুরু হবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। এটি যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে নতুন করে প্রত্যাশা তৈরি করেছে।
চীনের সাহায্য চাইছে মস্কো
রাশিয়ার অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার চীন। গত বছর দেশ দুটির মধ্যে রেকর্ড ১৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে যখন একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, তখন রুশ তেল-গ্যাসের অন্যতম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে ভাবা হয়েছে চীনকে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এখন মস্কো ও বেইজিং ঘনিষ্ঠ মিত্র। চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক জোরালো হওয়ার বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উভয়ের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক। তাই পুতিন ইউক্রেনে হামলার অভিপ্রায় চীনকে আগে থেকে জানাননি, এটা মানতে নারাজ অনেকে। তার উপর এবার সাহায্য চাওয়ার অভিযোগে তাই পিঠ সোজা করে বসছে যুক্তরাষ্ট্র।
সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস (এফটি) এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের কাছ থেকে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা চেয়েছে রাশিয়া। এফটি-র প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বেইজিংয়ের কাছে সামরিক রসদ চেয়েছে মস্কো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এফটি জানিয়েছে, ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকেই চীনের কাছে যুদ্ধের সরঞ্জাম চেয়ে অনুরোধ করে আসছে রাশিয়া।
তবে, রাশিয়া ঠিক কী ধরনের সরঞ্জাম চাইছে তা উল্লেখ করেন নি কর্মকর্তারা। চীন এবার রাশিয়াকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এদিকে, নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনেও মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়া তাদের উপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রশমিত করতে অর্থনৈতিক সহায়তা চাইছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে চীন বরাবরই নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল। এখন পর্যন্ত রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা করেনি তারা।
আশা করা হচ্ছে, সোমবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান চীনা পররাষ্ট্র নীতির শীর্ষ কর্মকর্তা ইয়াং জিচির সাথে আলোচনা করবেন।
এর আগে রোববার এনবিসি কে সুলিভান বলেছিলেন, চীন বা অন্য কোনো দেশ যাতে রাশিয়াকে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য না করতে পারে তা নিশ্চিত করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
রাশিয়া চীনের কাছে সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় ধরনের সহায়তা চাইছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এফটি বলেছে, মস্কো চাইছে বেইজিং ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য সামরিক উপকরণ সরবরাহ করুক।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রাশিয়াকে কোনো সহায়তা দিলে চীনকে ‘অবশ্যই’ পরিণতি ভোগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেনগুই বলেছেন, আমি কখনোই এরকম কিছু শুনিনি। সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সব ধরনের গঠনমূলক উদ্যোগকে আমরা উৎসাহিত এবং সমর্থন করছি।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে- আগ্রাসন চালানোর আগে রাশিয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে বেইজিং জানতো। তবে মস্কোর বিস্তারিত পরিকল্পনা বেইজিং বুঝে উঠতে পারেনি বলেও মনে করেন তিনি।
জ্যাক সুলিভান বলেছেন, বেইজিংয়ের ওপর নজর রাখছে ওয়াশিংটন। আমরা সরাসরি এবং ব্যক্তিগতভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, রাশিয়ার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে অবশ্যই পরিণতি ভোগ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞা থেকে বাঁচতে বিশ্বের কোনো দেশ থেকে কিংবা কোনো স্থান থেকে রাশিয়াকে কোনো ধরনের লাইফলাইন পেতে দেওয়া হবে না।
যদিও চীনের রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল টাইমস সংবাদপত্রের সাবেক সম্পাদক হু জিজিন বলেছেন, ইউক্রেন সংঘাতে জড়িত উভয় পক্ষকে সামরিক সহায়তা প্রদান বন্ধ করা উচিত। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩৫
আপনার মতামত জানানঃ