সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৮৪৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১২ জন, আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৪৬ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১৪৩ জন নারী ও ১৩০ জন শিশু। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে দেশে ৫ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৭ হাজার ৮০৯ জন। আহত হন ৯ হাজার ৩৯ জন। সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট দুর্ঘটনার ৯১ শতাংশই সড়কে ঘটছে। এদিকে, ২০২০ সালে দেশে চার হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৪৩১ জন নিহত এবং সাত হাজার ৩৭৯ জন আহত হন।
আজ শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় গত ২ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৭ দশমিক ১৫ জন নিহত হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ৪৩১ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৪৩ জন নিহত হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে ৪১৭ টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৬৯ জন। এই হিসাবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে ৭ দশমিক ১২ শতাংশ এবং প্রাণহানি কমেছে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। গত দুই মাসে চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩১ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম প্রাণহানি হয়েছে সিলেট বিভাগে। গত দুই মাসে সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত হয়েছেন।
একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৪৮ জন নিহত হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় সবচেয়ে কম ২ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় ২১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৭ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২ মাসে ঢাকা, রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১২৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
এছাড়া নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ১১ জন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক ২৭ জন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সাংবাদিক ৬ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ৫৪ জন, ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ২৩ জন, চিকিৎসক ৩ জন, পল্লী চিকিৎসক ৪ জন, স্বাস্থ্যকর্মী ২ জন, খাদ্য কর্মকর্তা ১ জন, ভূমি কর্মকর্তা ১ জন, সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তা ১ জন, কৃতি ফুটবলার ১ জন, সাবেক কৃতি ক্রিকেটার ১ জন, বাউল শিল্পী ১ জন, পিএইচপি গ্রুপের প্রধান প্রকৌশলী ১ জন, গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ জনসহ বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ১১ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৮ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৪৬ জন, পোশাক শ্রমিক ১৯ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৮ জন, ইটভাটা শ্রমিক ৩ জন, কাঠমিস্ত্রি ৩ জন, রাজমিস্ত্রি ৪ জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ১ জন এবং মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ৫ জন নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৩৫৩টি (৪১ দশমিক ৬২ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২৯৫টি (৩৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ১৪৩টি (১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৪৬টি (৫ দশমিক ৪২ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ১১টি (১ দশমিক ২৯ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৮৪৮টি সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, এতে নিহত হয়েছে ২২ দশমিক ৭২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ, এতে নিহত হয়েছে ২২ দশমিক ৮২ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, এতে নিহত হয়েছে ১৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ, এতে নিহত হয়েছে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ, এতে নিহত হয়েছে ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, এতে নিহত হয়েছে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, এতে নিহত হয়েছে ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ, এতে নিহত হয়েছে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সংঘটিত ৮৪৮টি সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ৩৫৮টি। এতে নিহত হয়েছেন ৪০৩ জন, যা মোট নিহতের ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
২ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছেন ২০২ জন, যা মোট নিহতের ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারি নিহত হয়েছেন ১৪৭ জন অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।
একই সময়ে ১২টি নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৭ জন। ২৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্প গতির যানবাহন চলাচল, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি। দুর্ঘটনা কমাতে এসব সমস্যা সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ ছাড়া একই সময়ে ১২টি নৌ দুর্ঘটনায় ৩৭ জনের মৃত্যু এবং ২৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭১৬
আপনার মতামত জানানঃ