জর্ডানের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় মরুভূমিতে কর্মরত প্রত্নতত্ত্ববিদরা ৯০০০ বছর পুরোনো ধর্মীয় অবকাঠামোর সন্ধান পেয়েছেন। এটি মানুষের নির্মিত প্রাচীনতম বিশাল এক কাঠামো যা নব্য প্রস্তরযুগের শিকারী সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এই প্রাপ্তি মধ্যপ্রাচ্যের সেই সভ্যতার দিকে ইঙ্গিত দেয় যা আগেকার ধারণার চাইতেও অনেক পুরোনো ।
সাইটটিকে গজেল শিকারের জন্য নিবেদিত একটি অনন্য আচারানুষ্ঠান স্থাপন বলে মনে করা হয় এবং এতে ‘মরুভূমির ঘুড়ি’ নামে পরিচিত বিশালাকার পাথরের ফাঁদ রয়েছে যা গবেষকদের মতে বিশ্বের প্রাচীনতম বড় আকারের মানব-নির্মিত ভাস্কর্য।
এই সর্বশেষ আবিষ্কারটি ২০২১ সালের অক্টোবরে সাউথ ইস্টার্ন বাদিয়া আর্কিওলজিক্যাল প্রজেক্ট (SEBAP) দ্বারা করা হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ বি. তারাউনেহ এবং ওয়ায়েল আবু-আজিজা, যারা গত এক দশক ধরে এই অঞ্চলে তদন্ত করছেন।
‘মরুভূমির ঘুড়ি’ শিকারের ফাঁদগুলি লম্বা পাথরের দেয়াল নিয়ে গঠিত যা শিকারকে এমন একটি ঘেরের দিকে নিয়ে যায় যেখানে সেগুলিকে আটকানো যেতে পারে এবং দলটি ২০১৩ সালে জিবাল আল-খাশাবিয়েহ এলাকায় প্রথম আবিষ্কার করেছিল।
এটি তখন শিকারীদের দ্বারা ব্যবহৃত ক্যাম্পসাইটগুলির আবিষ্কারের দিকে পরিচালিত করে যাদের জীবন মরুভূমির ঘুড়ি এবং খেলা ধরার চারপাশে কেন্দ্রীভূত ছিল। বাসিন্দারা আধা-ভূগর্ভস্থ বৃত্তাকার কুঁড়েঘরে বাস করত এবং মৃৎপাত্র এবং পশুর হাড় ইতিপূর্বে পাওয়া গেছে।
এই প্রাপ্তি মধ্যপ্রাচ্যের সেই সভ্যতার দিকে ইঙ্গিত দেয় যা আগেকার ধারণার চাইতেও অনেক পুরোনো ।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন যে নতুন আবিষ্কার এই প্রাচীন মানুষের সৃজনশীল এবং আধ্যাত্মিক অভিব্যক্তিগুলির একটি অন্তর্দৃষ্টি দেয়। এটি দুটি পাথরের খোদাই নিয়ে গঠিত, যার নাম দেওয়া হয়েছে গাসান এবং আবু গাসসান। দুটির লম্বা, ১১২ সেন্টিমিটার, একটি মরুভূমির ঘুড়ির উপস্থাপনা দিয়ে খোদাই করা হয়েছে একটি মানব চিত্র সহ, যখন ছোটটি ৭০ সেন্টিমিটার, একটি সূক্ষ্মভাবে বিশদ মানব মুখ রয়েছে।
অন্যান্য আবিস্কারের মধ্যে রয়েছে একটি ধর্মীয় বেদীর পাথর, একটি চুলা, প্রায় ১৫০টি সামুদ্রিক জীবাশ্মের একটি যত্ন সহকারে সাজানো সংগ্রহ, সেইসাথে পশুর মূর্তি এবং সূক্ষ্মভাবে সঞ্চালিত চকমকি বস্তু।
SEBAP এক বিবৃতিতে বলেছে, নিওলিথিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এই ধরনের একমাত্র স্থাপত্য মডেল।
SEBAP বলে, ‘সাক্রাল প্রতীকবাদ এবং আচার-অনুষ্ঠানের পারফরম্যান্স সম্ভবত সফল শিকার এবং শিকারের প্রাচুর্যের জন্য অতিপ্রাকৃত শক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নিবেদিত ছিল’।
‘এটি প্রতীকবাদ, শৈল্পিক অভিব্যক্তি এবং সেইসাথে এই অজানা নিওলিথিক জনসংখ্যার আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির উপর সম্পূর্ণ নতুন আলোকপাত করে [who] ‘মরুভূমির ঘুড়ি’ ব্যবহার করে গজেলদের গণ শিকারে বিশেষীকৃত৷
জর্ডানের প্রত্নতত্ত্ববিদ, ওয়ায়েল আবু আজিজা সাংবাদিকদের জানান, ‘এ যাবৎ জানা মতে মানুষের তৈরী এটিই সবচাইতে পুরোনো কাঠামো’।
তিনি বলেন, নব্য প্রস্তর যুগের শিকারীরা ৯০০০ বছর আগে ব্যাপক আকারের বন্য প্রাণীদের ফাঁদে আটকাতে এ ধরণের বিশাল পাথরের ঘের ব্যবহার করতো। এছাড়াও একটি কাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছে, যাকে ধর্মীয় অবকাঠামো বলে ভাবা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন সেখানে এমন সব বস্তু রয়েছে যা প্রাচীন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এই আবিষ্কার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আম্মানে অবস্থিত আমেরিকান সেন্টার অফ রিসার্চ-এর প্রত্নতত্ত্ববিদ পিয়ার্স পল ক্রিসমান বলেন, জর্ডানে পাওয়া আইন গাজাল স্ট্যাচুর মত অন্যান্য একই ধরণের কাঠামোর চাইতে সম্ভবত এটি আরো পুরাতন।
ক্রিসমান বলেন, ‘এটি এক অসাধারণ আবিষ্কার এতে কোনো সন্দেহ নেই। আইন গাজাল মূর্তিগুলোকে সাধারণতঃ সবচাইতে পুরাতন এবং মানব সভ্যতার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য কাজ বলে ভাবা হতো; তাই এই আবিষ্কার যেন আমাদের আরো কিছুটা আগে নিয়ে গেলো, আরো প্রাচীনের দিকে’।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল জানায় এই আবিষ্কারের মাধ্যমে নব্যপ্রস্তর যুগের শিকারী সম্প্রদায় কি ভাবে শিকার করতো তার একটা ধারণা পাওয়া যায়, যা ছিল ইরাকের উন্নত আসিরিয়ান সভ্যতার কয়েক হাজার পূর্বেকার, যা ছিল কম বিকশিত এবং যেখানে সভ্যতার পূর্বেকার চিহ্নগুলি প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানান, এই বিশাল আবিষ্কারটি মধ্যপ্রাচ্যের মানব সভ্যতার প্রাথমিক ধারণাকে বদলে দিতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৫
আপনার মতামত জানানঃ