ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
রংপুরের বদরগঞ্জে ওয়ালিউর রহমান ওরফে দোলন নামের এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক পৌর কাউন্সিলর ফারুক সরদার ওরফে মধু বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
ওয়ালিউর রহমান ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী। তিনি ১৯৯৯-২০০১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। তার বাড়ি বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে। তিনি সপরিবার ঢাকায় থাকেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, গত ২৩ জানুয়ারি ওয়ালিউর রহমান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও বর্তমান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। এতে তিনি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, ফেসবুকে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো অপরাধ করেছেন। এ কারণে ওয়ালিউর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ (২), ২৯ (২) ও ৩১ (২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি আমার ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার পরিবারের কাউকে নিয়ে কোনো কথা বলিনি। তিনজন মন্ত্রীর কার্যকলাপ নিয়ে কিছু কথা বলেছি। সেটা মানহানিকর হতে পারে, কিন্তু মিথ্যা কোনো অপবাদ বা দুর্নীতির কোনো অভিযোগ উপস্থাপন করিনি। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল আমাকে প্রতিপক্ষ মনে করে বিপদে ফেলতে থানায় এ মামলা করেছেন।’
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওয়ালিউর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় ওই মামলা হওয়ার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার আসামির দণ্ড মওকুফ হয় অথবা দ্রুত জামিন হয়, ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাত থেকে লুটপাটকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, হাজার-কোটি টাকা বিদেশে পাচারকারী সহজেই দেশ ছাড়তে পারে, কিন্তু ফেসবুকে সরকারবিরোধী কিংবা ক্ষমতাসীন সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে কিছু লেখা যেন তার চাইতে বড় অপরাধ!
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২২
আপনার মতামত জানানঃ