পৃথিবীর বাইরে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের একটি ঠিকানা আছে। সেটা হলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএস। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন হলো পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত একটি বাসযোগ্য কৃত্রিম উপগ্রহ। ১৯৯৮ সাল থেকে ২৪ বছর বয়সী আইএসএস এখনো জায়গামতো বহাল আছে। কিন্তু এই স্টেশন থাকবে কত দিন?
২০৩০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)। এর পরের বছরের শুরুর দিকে এটি প্রশান্ত মহাসাগরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ভেঙে পড়তে পারে। গত সপ্তাহে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সূত্র মতে, ২০৩১ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি ভেঙে পড়বে পৃথিবীতে। গতকাল শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ২০৩০ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। ২০৩১ সালের প্রথম দিকে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এটি ভেঙে পড়তে পারে।
নাসা জানায়, প্রশান্ত মহাসাগরে পয়েন্ট নিমো নামে একটি জায়গা রয়েছে। পুরোনো মহাকাশযানের ভাগাড় হিসেবে ওই এই জায়গা পরিচিত। অনেক পুরোনো মহাকাশযান ও মহাকাশবর্জ্য ওই জায়গায় জমা আছে।
পয়েন্ট নিমোতে রুশ মহাকাশ স্টেশন মির ধ্বংসাবশেষও রয়েছে। ২০০১ সালে মির এখানে ভেঙে পড়ে। ২০৩১ সালের শুরুতে সেই একই জায়গায় পড়বে আইএসএস।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচটি মহাকাশ সংস্থা। ১৯৯৮ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন।
এর আগে গত বছরের আগস্টে বড় বিপদের মুখে পড়েছিল আইএসএস। বেশ কয়েকটি জায়গায় বড়সড় ফাটল ধরা পড়েছিল আন্তর্জাতিক ফুটবল মাঠের দৈর্ঘ্যের মহাকাশ স্টেশনে। ফাটলগুলোর ফলে শক্তিশালী মহাজাগতিক রশ্মি ও নানা ধরনের ক্ষতিকারক মহাজাগতিক বিকিরণ ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল আইএসএসে।
একবিংশ শতকের শুরু থেকে মহাকাশে তিন হাজারের বেশি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এই স্টেশনে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইএসএসের কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল। তবে পাঁচটি মহাকাশ সংস্থা এই স্টেশনের কার্যক্রম ২০৩০ সাল পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়।
প্রসঙ্গত নাসা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে পৃথিবী থেকে পরিচালিত মহাকাশ কার্যক্রম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হতে পারে। বিশেষত পৃথিবীর কক্ষপথ ও এর আশপাশে যেসব অভিযান পরিচালিত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে বাণিজ্যিক খাত। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণা ও অভিযানে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে নাসার বাণিজ্যিক মহাকাশ বিভাগের পরিচালক ফিল ম্যাকঅ্যালিস্টার বলেন, পৃথিবীর কক্ষপথে অভিযান পরিচালনায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো কারিগরি ও আর্থিকভাবে সক্ষম। এ বিষয়ে নাসার পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।
আইএসএসে সংযুক্ত করার জন্য একটি বাসযোগ্য মডিউল তৈরিতে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অ্যাক্সিওম স্পেসের সঙ্গে চুক্তি করেছে নাসা। একই সঙ্গে মহাকাশ স্টেশনসহ পৃথিবীর কক্ষপথে বিভিন্ন বাণিজ্যিক গন্তব্যের নকশা প্রণয়নে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংস্থাটির পক্ষ থেকে চুক্তি করা হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, এখন চালু থাকা আইএসএসের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এসব নতুন প্রকল্পের কার্যক্রম আংশিক হলেও চালু হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মহাকাশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নানাভাবে চেষ্টা করছে নাসা।
ইতিমধ্যে ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্সসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আইএসএসে মহাকাশচারী ও পণ্য নিয়ে বাণিজ্যিক মহাকাশযান পাঠাতে শুরু করেছে। মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোসের মহাকাশ পর্যটন সংস্থা ব্লু অরিজিন চলতি দশকের দ্বিতীয়ার্ধে নতুন একটি মহাকাশ স্টেশন উৎক্ষেপণ করতে চায়।
নাসা জানিয়েছে, মহাকাশ কার্যক্রমে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করা, এই খাতে ব্যয়সাশ্রয়ী উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে সংস্থাটির ১৩০ কোটি ডলার সাশ্রয় হতে পারে।
কেননা, আইএসএসের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ভার এটির ব্যবহারকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে চলে যাবে। নাসা যেসব সেবা নেবে, শুধু সেসবের জন্য অর্থ ব্যয় করবে। তবে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে দূরবর্তী অভিযানগুলো নাসা নিজ অর্থে পরিচালনা করবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ