নিউ ইয়র্কের এক চিড়িয়াখানায় সমলিঙ্গের পেঙ্গুইন দম্পতি তত্ত্বাববধানে ডিম ফুটে জন্ম নিল এক ফুটফুটে পেঙ্গুইন শিশু।
এলমার এবং লিমা, সমলিঙ্গের এই পুরুষ পেঙ্গুইন দম্পতির উষ্ণতায় বিষমকামী পেঙ্গুইন দম্পতি পকিতা এবং ভেন্তের ডিম ফুটে এই বছরের ১ জানুয়ারি জন্ম নিল এক মিষ্টি পেঙ্গুইন ছানা।
এটি এই চিড়িয়াখানায় সমলিঙ্গের পেঙ্গুইন দম্পতির তত্ত্বাবধানে ডিম ফুটে জন্ম নেওয়া প্রথম শিশু। জন্মের পাঁচ দিনের মাথায় শিশুটির ওজন ছিল ২২৬ গ্রাম।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মতে, অনেক সময়ই পালক অভিভাবকের উষ্ণতার সাহায্যেই জন্ম নেয় পেঙ্গুইন শিশু।
এই একবিংশ শতাব্দীতে মনুষ্য সমাজের সমলিঙ্গের দম্পতিকে অধিকার আদায়ের জন্য যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তবে পেঙ্গুইনদের সমাজে সমলিঙ্গের সম্পর্ক খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
২০২১ সালে এসে ২০১৬ সালে জন্মানো এলমার তার চেয়ে বছর তিনেকের ছোট লিমাকে নিজের সঙ্গী হিসাবে বেছে নেয় ।
এর আগে বার্লিনের চিড়িয়াখানায় ‘বাবা-মা’ হয় দুই পুরুষ পেঙ্গুইন৷ স্কিপার আর পিং নামের দুই পেঙ্গুইন আকারে-ইঙ্গিতে বোঝাতো তারা সন্তান নিতে চায়৷
ধারেকাছে পাথর, এমনকি ছোট মাছ পেলেও তার ওপর বসে ডিমে তা দেয়ার ভঙ্গি করতো৷ বিষয়টা চোখে পড়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের৷
একদিন এক নারী পেঙ্গুইন একটা ডিম পেড়ে একটু সরে যেতেই একজন সেই ডিম নিয়ে স্কিপার আর পিং-এর সামনে রাখেন৷ একটু সময় নষ্ট না করে স্কিপার বসে পড়ে সেই ডিমের ওপর৷ তারপর থেকে চলে পালা করে ডিমে তা দেয়া৷
যদিও অনেকেই সমকামিতাকে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ মনে করেন। তবে ২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা প্রাণিজগতে পনেরশ’রও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার সন্ধান পেয়েছেন।
আর মেরুদণ্ডী প্রাণির তিনশ’রও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব খুব ভালোভাবেই নথিবদ্ধ। সংখ্যাগুলো কিন্তু প্রতিদিনই বাড়ছে।
এমনকি নৃতত্ত্ববিদরা কোনও মানবসমাজ পাননি যেখানে সমকামিতা বলে কিছু নেই। সমকামিতা ছিল গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্যে, সাইবেরিয়ান সামানদের মধ্যে, নেটিভ আমেরিকানদের সমাজে, আফ্রিকান ট্রাইবে, চৈনিক রাজবংশে, আরব ও ভারতীয় সভ্যতায়।
পশুপাখিদের মধ্যে সমকামিতা খুবই স্বাভাবিক। জিরাফদের সমলিঙ্গের মধ্যে ভালোবাসার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ এমনকি গবেষকরা বলছেন, জিরাফদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই সমলিঙ্গের সঙ্গীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়৷
বোতলনাক ডলফিন প্রজাতির স্ত্রী ও পুরুষ দুই ধরনের ডলফিনের মধ্যেই সমকামিতা দেখা যায়৷ মুখ এবং নাক দিয়ে স্পর্শ করে সঙ্গীকে আদর করে তারা৷ পুরুষ ডলফিনরা সাধারণত উভকামী৷
পশু রাজ সিংহের মধ্যেও সমকামিতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার৷ দুই থেকে চারটি পুরুষ সিংহ একটি জোট গঠন করে, যাতে সিংহীরা তাদের কাছে আসতে না পারে৷ অন্য জোট থেকে বাঁচতে একে অপরের উপর ভীষণ নির্ভরশীল তারা৷
পুরুষ বাইসনদের মধ্যে সমকামিতা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার৷ কেননা স্ত্রী বাইসনদের সঙ্গে বছরে একমাত্র একবার মিলন হয় তাদের৷ তাই প্রজনন মৌসুমে পুরুষ বাইসনরা একে অপরের সঙ্গে দিনে বহুবার মিলিত হয়৷
ম্যাকাক প্রজাতির নারী ও পুরুষ বানর – উভয়ের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে৷ যেখানে পুরুষরা মাত্র একরাতের জন্য সমলিঙ্গের সঙ্গে মিলিত হয়, সেখানে স্ত্রী বানররা নিজেদের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তোলে এবং একে অপরের সঙ্গে থেকে যায়৷
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের লেসন অ্যালবাট্রসরা তাদের সমকামী বন্ধনের জন্য ভীষণভাবে পরিচিত৷ এরা এতটাই বন্ধনে জড়িয়ে যায় যে পুরো জীবন একসাথে কাটিয়ে দেয়, যেন মনে হবে একটি সন্তান সহ স্বামী-স্ত্রীর সুখি পরিবার৷
অনেক পাখিদের মতো রাজহাঁসরাও একগামী এবং বছরের পর বছর ধরে তারা এক সঙ্গীর সঙ্গে কাটিয়ে দেয়৷ এদের মধ্যে অনেকেই সঙ্গী হিসেবে সমলিঙ্গের হাঁসকে বেছে নেয়৷ শতকরা ২০ ভাগ রাজহাঁস সমকামী এবং তারা প্রায়ই পরিবার গঠন করে৷
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পুরুষ ভেড়ার পালের ৮ ভাগ ভেড়াই সঙ্গী হিসেবে পুরুষদের পছন্দ করে, এমনকি প্রজননের সময়ও৷
এসডব্লিউ/এসএস/১৫০৩
আপনার মতামত জানানঃ