শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কে নিষিদ্ধ করতে ১২ শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে জাতিসংঘে পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা চিঠিটি দেখেছে, পড়েছে এবং এতে যে বিষয়টির (র্যাবের নিষেধাজ্ঞা) কথা বলা হয়েছে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কে অবিলম্বে বাদ দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ১২টি শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন। এর পূর্বেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশে অব্যাহত মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আহবান জানিয়েছিল বিশ্ব সংস্থাটির নিকট।
র্যাবের মানবাধিকার লংঘনের সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের ‘পিস অপারেশন’ এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জিন পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে ১২ শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা। বৃহস্পতিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাবকে নিষিদ্ধের দাবিতে জাতিসংঘের অবস্থান
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি এবং র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে করা দুই জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এভাবেই জাতিসংঘের জবাব তুলে ধরেন মহাসচিব আন্থোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিক।
ডোজারিক জানান, মানবাধিকার বিষয়টিকে জাতিসংঘ সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার দেয়। বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে জাতিসংঘ মিশনে র্যাবের নিষেধাজ্ঞার যে দাবি উঠেছে পিসকিপিং ডিপার্টমেন্ট তা অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে দেখভাল করবে বলেও উল্লেখ করেন মহাসচিবের মুখপাত্র।
নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান- ‘১২ শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন জাতিসংঘ মিশনে র্যাবের নিষেধাজ্ঞার যে দাবি উঠেছে সে বিষয়ে আমি পূর্বের সহকর্মী জেমসের (আলজাজিরার ডিপ্লোমেটিক এডিটর) করা প্রশ্নের সম্পূরক একটা প্রশ্ন করতে চাই।
এই চিঠিতের রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এর প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি বলেছেন, “র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ এখন হাতেনাতে। জাতিসংঘের এ ব্যাপারে সীমারেখা টেনে দেবার সময় এসেছে।” এ মন্তব্যের সঙ্গে আপনি কী একমত পোষণ করেন?” জবাবে মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, আমরা চিঠিটি দেখেছি, পড়েছি এবং এতে যে বিষয়টির (মানবাধিকার লংঘন) কথা বলা হয়েছে সেটার দিকেই আমাদের মনোযোগ।
তিনি আরও বলেন, পিসকিপিং ডিপার্টমেন্টের আমাদের যে সহকর্মী বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে দেখভাল করেন। একই কারণে বিগত বছরগুলোতে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়ন এবং যাচাই-বাছাই আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।
এর আগে ১২ মানবাধিকার সংগঠনের পাঠানো চিঠি, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উত্থাপন করেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার কূটনৈতিক এডিটর জেমস বেইস।
তিনি জানতে চান, বাংলাদেশের বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দিতে জাতিসংঘের পিসকিপিং অপারেশন এর আন্ডার সেক্রেটারি’র কাছে চিঠি পাঠিয়ে আহবান জানিয়েছে ১২ মানবাধিকার সংস্থা। আপনি এটাও অবগত আছেন যে বাংলাদেশের এই বাহিনীর উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এবিষয়ে জাতিসংঘ কী অবগত? কিংবা কোন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে কী না?
জবাবে ডোজারিক বলেন, আমরা যে চিঠিটা পেয়েছি সেটা খুব বেশি সময় হয়নি। আমরা আপনাকে যেটা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই সেটা হল-মানবাধিকার পরস্থিতি যাচাই-বাছাইয়ে জাতিসংঘ তার অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে।
সেটা যেকোনো দেশের যেকোনো বাহিনীই হোক। যা হচ্ছে তাকে আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি।
মুখপাত্রের উত্তরের মধ্যেই সাংবাদিক জেমস আবার বলেন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন যেটা বলছে এই বাহিনীকে (র্যাব) যদি এখনো মিশনে যুক্ত রাখা হয় তবে তা মানবাধিকার পক্ষে অবস্থান জোরালো থাকবে না। ডোজারিক বলেন, আমি ইতিমধ্যে বলেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
‘মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্ভাবনা বাড়াবে র্যাব’
হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি বলেন, “জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যদি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার বিষয়ে গুরুতর হন, তাহলে তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মতো বিতর্কিত ইউনিটগুলোকে মিশনে মোতায়েন থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।”
তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে; এখন জাতিসংঘের সময় এসেছে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার।”
এদিকে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক লুই শাঁবু প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে র্যাবের সদস্যদের মোতায়েন করলে আদতে জাতিসংঘের মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্ভাবনা বাড়াবে।”
তিনি বলেন, “জাতিসংঘের উচিত হোস্ট এবং নিজেদের সৈন্য পাঠানো দেশগুলোকে এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট সংকেত পাঠানো। তাদেরকে জানানো উচিত যে, অপমানজনক ইউনিটগুলো জাতিসংঘের অংশ হবে না।”
এসডব্লিউ/এসএস/১৮০০
আপনার মতামত জানানঃ