বাংলাদেশে ইন্টারনেট-ভিত্তিক টেলিভিশন (আইপি টিভি) বা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে খবর প্রচারের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমের যখন বিস্তার ঘটছে, তখন সরকারের এমন অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।
তবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে আইপি টিভি বা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে খবর প্রচার বন্ধের দাবি করে আসছেন। এসব মিলিয়ে সরকারের এই বন্ধের সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক, এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
সরকারের যুক্তি এবং থোলের বিড়াল
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অনুযায়ী আইপি টিভি বা ইউটিউবের মাধ্যমে খবর প্রচার করা যায় না। এরপরও জেলায় জেলায় এই নীতিমালা ভঙ্গ করে আইপি টিভি বা ইউটিউবের মাধ্যমে খবর প্রচার করা হচ্ছে।
এখন আইপি টিভি এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে খবর প্রচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হলো সরকারের পক্ষ থেকে। এই ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আইনগত ভিত্তি হিসাবে বলা হচ্ছে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালার বিষয়কে।
যদিও কিছুদিন আগেই তথ্য মন্ত্রণালয় ১৪টি আইপি টিভিকে নিবন্ধন দিয়েছে। অবশ্য অনুমোদন পাওয়া এই আইপি টিভিগুলোও খবর প্রচার করতে পারবে না।
বিভিন্ন সময়ই সরকারের পক্ষ থেকে আইপি টিভি বা ইউটিউবের মাধ্যমে খবর প্রচারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
গতকাল তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, নীতিমালায় যে নিয়ম রয়েছে, সেটা তারা কার্যকর করতে চাইছেন। বাংলাদেশে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে, অনেকে আইপি টিভি বা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে একটা টেলিভিশন চ্যানেলের মতো নিয়মিত সংবাদ প্রচার করছে। এটা নীতিমালা পরিপন্থী।
এদিকে জানা গেছে, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর নেতারা তথ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আইপি টিভি বা ইউটিউবের মাধ্যমে খবর প্রচার বন্ধের ব্যাপারে আবারও তাগিদ দিয়েছেন।
অ্যাটকো তাদের অবস্থানের পক্ষে গণমাধ্যম নীতিমালা বা আইনগত বিষয়কে যুক্তি হিসাবে তুলে ধরেন। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, অ্যাটকোর নেতারা তার সাথে দেখা করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সেই অভিযোগে বলা হয়েছে যে, দেশে আইপি টিভির নামে এবং ইউটিউবের মাধ্যমে অনেকে সংবাদ পরিবেশন করছে। এছাড়া অনেক পত্রিকাও ইউটিউবের মাধ্যমে টেলিভিশনের মতো নিউজ বুলেটিন করছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, পত্রিকার ডিক্লারেশন বা আইনে তারা এটা করতে পারে না। সেজন্য আইন অনুযায়ী তারা এখন ব্যবস্থা নেবেন। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের এই অবস্থান তিনি অ্যাটকো নেতাদের জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইপি টিভি, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমের বিস্তারের মুখে বেসরকারি টেলিভিশনসহ প্রচলিত গণমাধ্যম চাপে পড়েছে। সেজন্য তাদের এমন অবস্থান দেখা যচ্ছে। ফলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের চাপের কারণে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমের কারণে একটা পরিবর্তন যে হয়েছে, সেটা অস্বীকার করার যাবে না। ফলে আইপি টেলিভিশনের বিস্তার ঘটবেই বলে তিনি মনে করেন।
এমন পরিস্থিতিতে প্রচলিত বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে আজ হোক বা কাল হোক আইপি টিভির প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতেই হবে। অধ্যাপক কাবেরী গায়েন আরও বলেন, সরকার আইপি টিভির সংবাদ পরিবেশন বন্ধ করে রাখতে পারবে না।
নিবন্ধন না করে বন্ধ কেন?
দেশের উত্তরের একটি জেলা বগুড়ায় ‘সুকরা’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল কোন নিবন্ধন ছাড়াই পাঁচ বছর ধরে খবর প্রচার করে আসছে।
এই চ্যানেলের মালিক আবক্দুল মান্নান বলেছেন, তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে আনা যেতে পারে। কিন্তু আইপ টিভি বা ইউটিউব চ্যানেলে খবর প্রচার বন্ধের যে পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে, সেটা সঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, মানুষের মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা অবস্থান হয়েছে, সেখানে এমন পদক্ষেপ মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতা হরণ করবে।
কিন্তু এমন বক্তব্য মানতে রাজি নন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, যে মিডিয়ার জন্য যে অনুমোদন বা ডিক্লারেশন আছে এর মধ্যেই তার থাকা প্রয়োজন।
টেলিভিশনগুলো যদি আবার পত্রিকা বের করা শুরু করে, সেটা যেমন সমীচিন নয়। এগুলো আইন এবং নিয়মের বরখেলাপ হবে।
এই ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া কীভাবে হবে- সে ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যারা আইপি টিভি বা ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে খবর প্রচার করছে, তারা নিজেরাই যাতে তা বন্ধ করে, সেজন্য তাদের নিয়ম বা নীতিমালা জানানো হবে।তারা নিজেরা বন্ধ না করলে তখন প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ