জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারী অভিবাসন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং ২৭ লাখ অভিবাসী বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় তিনি দেশগুলোকে অভিবাসীদের আটক না করে বিকল্পপথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে দেশে বসবাস ও কাজের অনুমতি বাড়ানো, অনিবন্ধিত অভিবাসীদের নিয়মিত করা এবং আটকে পড়া অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘ বহুমুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘কিছু দেশ অভিবাসীদের অনিরাপদ মনে করে তাদের ফেরার বিষয়টি স্থগিত করেছে। অন্যদেশগুলো যারা ফিরেছেন বা যারা নির্বাসিত হয়েছেন তাদের সমর্থন নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।’ তিনি জানান, দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক অভিবাসনে সহযোগিতার এক ব্যাপক কাঠামো হিসেবে ২০১৮ সালে গৃহীত বৈশ্বিক চুক্তিটি মহামারী সত্ত্বেও ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ পথে ব্যবস্থা গ্রহণে পথ দেখাচ্ছে।
১ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক চুক্তিটি বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এক ভিডিও বার্তায় গুতেরেস বলেন, এই চুক্তিটি ক্রমবর্ধমান বিশ্বে মানব গতিশীলতা বুঝতে সহায়তা করে। তবে এটি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয় মাইগ্রেশন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে। জীবন হারানো থেকে শুরু করে অধিকার লঙ্ঘন ও সামাজিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। তার মতে, ২০৩০ সালে ২০১০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে।
এদিকে গতকাল বুধবার জলবায়ুবিষয়ক বিবিসির বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বিরূপ ও ধ্বংসাত্মক আচরণ নিয়ে কঠিন হুশিয়ারি দিয়েছেন গুতেরেস। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে মানুষ। নানাভাবে পরিবেশ ধ্বংস করছে। আঘাতে আঘাতে ভেঙে পড়েছে পৃথিবী। পরিবেশের বিরুদ্ধে মানুষের এই যুদ্ধকে ‘আত্মঘাতী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। বলেছেন, প্রকৃতি ধ্বংসের মাধ্যমে মানুষ আসলে তার নিজের ধ্বংসই ডেকে আনছে। প্রকৃতির পাল্টা আঘাতের বিষয়ে হুশিয়ারি দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘প্রকৃতি সব সময় পাল্টা আঘাত করে। আর এখন সে প্রতিনিয়তই তার শক্তি ও ক্রোধ বৃদ্ধি করে চলেছে।’ তিনি জানান, জাতিসংঘের বৈশ্বিক কার্যক্রমের একেবারেই কেন্দ্রে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই ‘স্টেট অব দ্য প্লানেট’ শীর্ষক বক্তব্য দেবেন তিনি। সেখানে সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো ঘোষণা করবেন। এর মধ্যে রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি কার্যকর বৈশ্বিক জোট গঠন করা ও গ্রিসহাউস গ্যাস নিঃসরণ শূন্যে নামাতে তথা ‘নেট জিরো’ করতে যা করা প্রয়োজন সবই তিনি করবেন বলেও জানান। নেট জিরো বলতে বোঝায়, গ্রিন হাউস গ্যাসের নিঃসরণ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। গুতেরেস মনে করেন, এ ব্যাপারে সব দেশ, শহর ও কোম্পানিকে উদ্যোগ নিতে হবে।
আসন্ন ‘স্টেট অব দ্য প্লানেট’ বক্তব্যে গুতেরেস যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে কার্বন নিঃসরণের ওপর কর আরোপ করা। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি তেল খাতে অর্থায়ন, বিনিয়োগ ও সব ধরনের ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব এবং বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে শিকার দেশ ও জাতিগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের অতি ভয়াবহ ফল ভোগ করছে পুরো বিশ্ব। দেশে দেশে একদিকে নারকীয় দাবানল আরেক দিকে রেকর্ড সংখ্যক বন্যা দেখা দিচ্ছে। এসব প্রাকৃতির দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এজেন্ডার কথা বলে আসছেন গুতেরেস। এবার এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অ্যাকশনের দিকে জোর দেবেন তিনি। বিবিসিকে গুতেরেস বলেন, ‘এর সায়েন্স খুবই পরিষ্কার। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে প্রতি বছর জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন ৬ শতাংশ হারে কমাতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যেতে থাকবে।’
এসডাব্লিউ/এমএন/আরা/১১২০
আপনার মতামত জানানঃ