প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। তারপর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে। প্রাণহানি ঘটে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের।
কিন্তু টিকা আবিষ্কারের পর ভাইরাসের প্রকোপ এরই মধ্যে কিছুটা কমেছে। তবে নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে বিশ্বের নানা প্রান্তে আবারও শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করেছে। করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে এখন বুস্টার ডোজের দিকে নজর দিচ্ছে বিশ্ব।
এমন পরিস্থিতে আশার খবর শোনালেন ফাইজার ভ্যাকসিনের গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট ন্যানেট কোসেরো। তিনি বলছেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই করোনা আর মহামারি পর্যায়ে থাকবে না। এটি একটি স্থানীয় রোগে পরিণত হবে।
অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে। অনেকটা অন্যান্য বিদ্যমান ফ্লুর মতোই। শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সিএনবিসির একি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
ন্যানেট কোসেরো শুক্রবার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ২০২৪ সালের মধ্যে করোনা একটি স্থানীয় রোগে রূপান্তরিত হবে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা টিকা নেওয়ার পর যখন মানুষের মধ্যে যথেষ্ট ইমিউনিটি তৈরি হবে তখন করোনা আর বৈশ্বিক মহামারিতে থাকবে না।
অন্যদিকে ফাইজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিকেল ডলস্টেন বলেন, ঠিক কখন ও কীভাবে মহামারি কমবে তা নির্ভর করে রোগের বিবর্তন ও কতটা কার্যকারভাবে বৈষম্য ছাড়াই টিকা নিশ্চিত করা যায় তার ওপর।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের গতি প্রকৃতির ওপরও এটা অনেকাংশে নির্ভর করছে। কীভাবে করোনা স্থানীয় রোগে পরিণত হবে তা স্থানভেদে আলাদা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
মিকেল ডলস্টেন বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে কোনো কোনো অঞ্চলে করোনা স্থানীয় রোগে রূপ নেবে। তবে অনেক অঞ্চলে মহামারি হিসেবে থাকতে পারে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৭৭টির বেশি দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হয়।
এরপর আফ্রিকান দেশগুলোর ওপর একের পর এক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অসংখ্য দেশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনার নতুন এই ধরনে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওমিক্রনে এমন কিছু মিউটেশন বা রূপান্তর ঘটেছে যার ফলে এর বিরুদ্ধে প্রচলিত টিকাগুলো কার্যকর না-ও হতে পারে।
তবে বিধিনিষেধের বিষয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় পদক্ষেপ নিতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের এই স্বাস্থ্য সংস্থা।
ডেল্টার থেকেও বেশি ছড়াচ্ছে ওমিক্রন
ডেল্টার থেকেও দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে ওমিক্রন, জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই সঙ্গে কমিয়ে দিচ্ছে টিকার কার্যকারিতাও। যে কারণে বিশেষজ্ঞরা বুস্টার ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকাতেই প্রথম খোঁজ মেলে ওমিক্রনের। পরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে নানা প্রান্তে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় আমেরিকায় কিন্তু আরও বেশি হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ডেল্টা। তবে ডেল্টার প্রভাব যে সব দেশে বেশি ছিল সেই সব দেশেই কিন্তু বেশি ছড়িয়েছে ওমিক্রন।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত যে সব তথ্য হাতে এসেছে সেই অনুযায়ী কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হলে কিন্তু ওমিক্রন ছাড়িয়ে যাবে ডেল্টাকেও। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ টি দেশে খোঁজ মিলেছে ওমিক্রন আক্রান্তের।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওমিক্রন ধরা পড়ে ২৪ নভেম্বর। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৬ নভেম্বর ওমিক্রনকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯২০
আপনার মতামত জানানঃ