ইসরায়েলকে নিয়ে কি নিজেদের অবস্থান বদলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? বেশ কিছুদিন ধরেই এই প্রশ্নটা ঘুরেফিরে উঠে আসছে আলোচনায়। সম্প্রতি এই আগুনকে আরও উস্কে দিল যুক্তরাষ্ট্রে ওঠা ইসরায়েলের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি। এর আগে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের অবৈধ বসতি নির্মাণ ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক বক্তব্যে এ প্রশ্নই উঠেছিল। সে সময় ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় হোয়াইট হাউজ। অবিলম্বে ইসরায়েলিদের ওই প্রকল্প বন্ধ করারও পরামর্শ দেয় তারা।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান
যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের একটি গ্রুপ ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার ফার্ম এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র দপ্তর এবং অর্থ দপ্তরের (ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট) কাছে এক চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি এনএসও গ্রুপ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাইবার সিকিউরিটি গ্রুপ ডার্কমেটার এবং ইউরোপীয় দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফাইন্যান্স কমিটির সভাপতি রন উইডেন, হাউস গোয়েন্দা কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফসহ ১৬ জন ডেমোক্রাটিক আইনপ্রণেতা।
চিঠিতে আইনপ্রণেতারা বলেছেন, স্পাইওয়্যার শিল্প যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ এবং ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভরশীল। তাদেরকে সত্যিকার অর্থে শাস্তি দিতে এবং নজরদারি প্রযুক্তি শিল্পকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচিত তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
এই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই কোম্পানিগুলো গুম, নির্যাতন হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তা করেছে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনএসওর গ্রুপের তৈরি করা স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মুঠোফোনের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বা চেষ্টা করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম সারির ১৬টি দেশের সাংবাদিকদের এক সংগঠন তদন্ত শেষে জানায়, কীভাবে বিভিন্ন দেশের সরকার এই প্রযুক্তির সাহায্যে নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে।
ইসরায়েলের বিরোধিতা
এর আগে চলতি বছর অক্টোবর মাসে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপনের ইসরায়েলি পরিকল্পনার ‘তীব্র বিরোধিতা’ করে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এমন অবস্থানের কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নেড প্রাইস বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নতুন করে হাজারের বেশি বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল সরকার। মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলের এমন পরিকল্পনার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
এই বিষয়ে নেড প্রাইস আরও বলেন, ‘আমরা (মার্কিন প্রশাসন) ইসরায়েলের এমন পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করছি। এই উদ্যোগ ওই অঞ্চলের উত্তেজনা কমিয়ে আনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে পুরোপুরি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’
এমনকি ইসরায়েলের বিরোধিতা সত্ত্বেও ফের ফিলিস্তিন মিশন চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াইর ল্যাপিড পশ্চিম জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের জন্য ওয়াশিংটনের কনস্যুলেট জেনারেল পুনরায় চালুর বিষয়টিকে একটি খারাপ ধারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সাধারণভাবে জেরুজালেমের এই কনস্যুলেট জেনারেলকে ফিলিস্তিনিদের জন্য মার্কিন কূটনীতির সদর দফতর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৪০
আপনার মতামত জানানঃ